নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ব্যবস্থা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার কথাও বলেছে সংস্থাটি। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলের বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। আইএমএফ স্টাফ ভিজিট মিশন-২০২২ নামে প্রতিনিধি দলটি গত বৃহস্পতিবার ঢাকা সফরে এসেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি নিয়ে ফের আপত্তি তুলে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, রিজার্ভের অর্থে গঠিত ইডিএফসহ বিভিন্ন ঋণ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনো রিজার্ভেই দেখানো হচ্ছে। অথচ এগুলো নন-লিকুইড সম্পদ বা ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড সিকিউরিটিজ। সংস্থাটির ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম-৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী, এসব দায় রিজার্ভ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দুটি পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একটি হলো গ্রস হিসাব। আরেকটি নিট হিসাব। নিট হিসাবে রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন ঋণ তহবিল বাদ দেয়া হয়। তবে আগামীতে আইএমএফের ম্যানুয়াল মেনেই রিজার্ভের হিসাব দেখানো হবে বলে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, রিজার্ভ হিসাবায়নে আইএমএফ যে পদ্ধতির কথা বলেছে, সেটিতে আগেই সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন এ বিষয়ে কাজ চলছে বলে বৈঠকে আইএমএফকে জানানো হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে আইএমএফের ম্যানুয়েল অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাবায়ন দেখানো সম্ভব হবে।
জানা যায়, বর্তমানে রিজার্ভের অর্থে ইডিএফে ৭০০ কোটি, জিটিএফে ২০ কোটি, এলটিএফএফে তিন কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে ৬৪ কোটি ডলার ও বাংলাদেশ বিমানকে চার কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণ দেয়া হয়েছে। এই ৭৯২ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের বাইরে কারেন্সি সোয়াপের আওতায় শ্রীলঙ্কাকে দেয়া হয়েছে ২০ কোটি ডলার। এটা রিজার্ভ থেকে বাদ দিলে প্রকৃত রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারে নামবে।
২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষন ও ব্যবসায় খরচ কমিয়ে আনতে সুদহারের সীমা বেধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে আসছে। গতকালের বৈঠকেও একই সুপারিশ করে আইএমএফ বলেছে, ঋণের সুদের সীমা না তুলে পলিসি রেট বাড়ানোর যৌক্তিকতা কোথায়। এর জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ হিসেবে পলিসি রেট বাড়ানো হয়েছে।
বৈঠকে চলতি অর্থবছরে প্রক্ষেপিত হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ঘাটতি রোধে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়।