ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণ নিশ্চিত করুন

শিল্পে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এখনও কৃষিনির্ভর। শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, রাস্তা তৈরি ও প্রশস্তকরণ, বাড়িঘরসহ অবকাঠামো নির্মাণ এবং নদীভাঙনে আবাদি জমি কমেই চলেছে। এর মধ্যে লোকসংখ্যা অনেক বেড়ে গেলেও আমাদের কৃষক শস্য উৎপাদনে সাফল্যের পরিচয় দিয়ে চলেছেন। দুঃখজনক সত্য হলো, সেই কৃষক বরাবরই বিভিন্নভাবে বঞ্চিত।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২০-এর তথ্যমতে, জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। নতুন শিল্পনীতিতে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কৃষি এখনও গুরুত্ব পাচ্ছে। দেশের শ্রমজীবীদের এক বড় অংশ এখনও কৃষিকাজে জড়িত। এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের বাইরে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এসব বিবেচনায়ই রাষ্ট্র কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। শস্য উৎপাদন, মৎস্যচাষ, পশুপালন, কৃষি যন্ত্রপাতি কেনা, দারিদ্র্য বিমোচন ও অন্যান্য খাতে ঋণ জোগানো হয় কৃষকদের। প্রতি বছরই কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু কৃষিঋণ বিতরণে বরাবরই ব্যাংকগুলোর অনাগ্রহ লক্ষণীয়।

গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘কৃষিঋণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না সাত ব্যাংক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ১৫টি ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে বরাবরই আগ্রহ কম দেখিয়ে আসছে। এর মধ্যে সাতটি ব্যাংকের আগ্রহ একেবারে তলানিতে নেমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সাতটি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ শতাংশ বিতরণ করতে পেরেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কৃষিঋণ বিতরণে পিছিয়ে রয়েছে মধুমতি ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। একইসঙ্গে দেশি-বিদেশি প্রায় ১৫ ব্যাংক ঋণ বিতরণে বেশ পিছিয়ে। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। আবার বিদেশি খাতের কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ও উরি ব্যাংক এখন পর্যন্ত এক টাকাও বিতরণ করতে পারেনি।

২০১৮ সালে কৃষিঋণ নীতিমালায় লক্ষ্যমাত্রার অন্তত ১০ শতাংশ মৎস্য খাতে বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া আগের মতোই কৃষিঋণের ৬০ শতাংশ শস্য এবং ১০ শতাংশ পশুসম্পদ খাতে বিতরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বেসরকারি খাতের কোনো ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে অনর্জিত অংশ বিনা সুদে এক বছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখার বিধানও বহাল রয়েছে। কেন কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ নেই, তা খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। অক্ষমতা নয়, বরং বিশেষ উদ্দেশ্যেই কৃষিঋণ বিতরণে উপেক্ষার মনোভাব লক্ষ করা যায়। অনেকে রাখঢাক না করেই বলেন, কৃষকরা তো ব্যাংকারদের ‘চাহিদা’ পূরণ করতে পারেন না। আমরা মনে করি, ব্যাংকাররা এত দায়িত্বহীন নন। তবুও অভিযোগের সত্যতা করে দেখা উচিত।

শুধু বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নয়, প্রকৃত কৃষকই যেন এ ঋণ পান; তা নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। বিতরণ করা ঋণের হালনাগাদ তথ্য যাচাইপূর্বক কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া গেলে কৃষিঋণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন নয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০