রোহান রাজিব: ২০২৩ সালে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেন ভাটা ছিল। গত বছর রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স লেনদেন প্রবাহ অনেক কমেছে। তবে এ সময় বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেন আগের তুলনায় বেড়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানিতে কড়াকড়ি করার কারণে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেনে প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ কমা এবং কোম্পানিগুলোর ঋণ কমে যাওয়ার প্রভাবেও লেনদেন কমেছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২৩ সালে দুই লাখ ২৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেন হয়, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৫ দশমিক ২ শতাংশ কম। ওই বছরে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা।
এ সময় ব্যাংকগুলোর রপ্তানি, আমদানি ও রেমিট্যান্স প্রতিটা ক্ষেত্রে লেনদেন কমে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি, আমদানি এবং রেমিট্যান্স লেনদেন হয় যথাক্রমে ৫০ হাজার ১০০ কোটি, এক লাখ ৭৮ হাজার ৭৬০ কোটি এবং ৩৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে তা কমে হয় যথাক্রমে ৩৭ হাজার ৯৬০ কোটি, এক লাখ ৫৫ হাজার ৩০ কোটি এবং ৩১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি ২৪ দশমিক ২ শতাংশ, আমদানি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স ১২ শতাংশ কমেছে।
গত বছর ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহ চেয়ে ঋণ বিতরণ বেশি ছিল। তথ্যমতে, গত বছর আমানত বেড়েছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ।
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় ২০২৩ সালে বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেন কমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। গত বছর এসব ব্যাংকে বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেন হয় ১৩ লাখ তিন হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। গত বছর এসব ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি ও আমদানির লেনদেন কমলেও রেমিট্যান্স লেনদেন বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে রপ্তানি ৫ দশমিক ২ শতাংশ কমে চার লাখ ৬৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। একই সময় আমদানি আগের বছরের তুলনায় দুই শতাংশ কমে পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। তবে রেমিট্যান্স আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে হয় দুই লাখ ৪১ হাজার ৮০ কোটি টাকা।
গত বছর বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোরও আমানতের চেয়ে ঋণ বিতরণ বেশি ছিল। ২০২৩ সালে ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহ বেড়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ঋণ বিতরণ হয়েছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
এদিকে বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমেও গত বছর বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেন কমেছে। ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় লেনদেন প্রায় ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কমে হয় দুই লাখ ৫৮ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, গত বছর এসব ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি, আমদানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আমদানি কমেছে ১ দশমিক ২৮ শতাংশ, রপ্তানি ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
অন্যদিকে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো গত বছর বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেন ভালো করেছে। ২০২৩ সালে তার আগের বছরের তুলনায় এসব ব্যাংকে বৈদেশিক লেনদেন বেড়েছে প্রায় ১১৫ দশমিক ৭ ২শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭ হাজার ২০ কোটি টাকার বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেন হয়। ২০২২ সালে এর পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৮৯০ কোটি টাকা।
গত বছর এসব ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি লেনদেন বেড়েছে প্রায় ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেনের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর গত বছর আমানত ও ঋণের প্রবৃদ্ধি ভালো হয়েছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আমানত বেড়েছে ১০ দশমিক ১ শতাংশ। আর ঋণে প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে সার্বিক আমদানি অনেক কমেছে। এক্ষেত্রে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ আমদানি তেমন হয়নি। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ, ক্যাপিটাল মার্কেটে বিদেশি বিনিয়োগ এবং বায়ার্স ক্রেডিট কমেছে। অন্যদিকে কোম্পানিগুলো বিদেশি ঋণও কমিয়ে দিয়েছে। সবমিলিয়ে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে।