নিজস্ব প্রতিবেদক: ফিনটেক ও ব্যাংক একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দুটি খাতই এগিয়ে যেতে পারে। এতে ব্যাংকের ব্যবসা কমবে না। বর্তমানে একই পণ্যের পেছনে সব ব্যাংক ছুটছে। অথচ ব্যাংকগুলো নিজেরা যৌথভাবেও অনেক কাজ করতে পারে। এভাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর মুনাফাও বৃদ্ধি সম্ভব।
ফিনটেক বা আর্থিক খাতের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা ও ব্যাংকিং বিষয়ে এমন মতামত দিয়েছেন আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা। ‘ফিনটেক অ্যান্ড রেগটেক: পসিবল ইমপ্যাক্ট অন ব্যাংকিং সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এমন মতামত দেন তারা। গতকাল রাজধানীর মিরপুরে নিজস্ব অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। এতে বিষয়টির ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয়।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান। আলোচনায় অংশ নেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর স্পেশিয়ালিস্ট একেএম আবদুল্লাহ, বিআইবিএমের ড. মোজাফফর আহমদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে মনিটর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়ে গাইডলাইনও দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিট কয়েনের ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে সচেতনতাও বাড়াতে নিয়মিত তদারকি করছে। সর্বশেষ ই-ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা জোরদারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যাংকারদেরও সতর্ক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর স্পেশিয়ালিস্ট একেএম আবদুল্লাহ বলেন, ফিনটেক বা আর্থিক খাতের প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে। সম্ভাবনাময় এ ব্যবস্থায় ব্যাংকিং খরচ কমিয়ে এনে গ্রাহকদের বেশি সেবা দেওয়া যায়। ফিনটেক পরিচালনাকারীরা ব্যাংকের বিপক্ষ নয়। তাদের সঙ্গে কাজ করলে ব্যাংকের ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে পুরোনো থেকে শুরু করে চারটি প্রজন্মের ব্যাংক রয়েছে। এক আইনের অধীনে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কাজ। ব্যাংকগুলো একটি পণ্যের পেছনেই ছুটছে। অথচ বেসিক ব্যাংকিংয়ের বাইরে সবাই পৃথক পৃথক পণ্য নিয়ে কাজ করতে পারে। কিছু পণ্য নির্ধারণ করে যৌথভাবেও ব্যাংকগুলোর কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এতে সব ব্যাংকই লাভবান হবে। একটি কমন প্ল্যাটফরম তৈরিতে কাজ করতে পারে এবিবি। আমাদের ইগো ও মনস্তাত্ত্বিক ধারায় পরিবর্তন আনতে পারলে এটি সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ব্যাংকিং সিস্টেমে ফিনটেক-রেগটেক-এর প্রভাবের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী।
আলোচিত বিষয়টির ওপর যৌথভাবে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিহাব উদ্দিন খান ও বিআইবিএমের প্রভাষক মো. ফয়সাল হাসান। গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে ফিনটেক বিষয়ে সচেতনতা জরুরি, কেননা ব্যাংক খাতে পরিবর্তিত প্রযুক্তির বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে সচেতনতা থাকলে ব্যাংক বা আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। আইটি খাতের দক্ষ কর্মীদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বুঝাতে হবে যে, আইটি খাতে ব্যয় হচ্ছে বিনিয়োগ। প্রচলিত খরচ কমিয়ে আরও বেশি মুনাফা করতে হলে ব্যাংককে আইটিতে বিনিয়োগ করতে হবে। নইলে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়বে তাদের ব্যাংক।
অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, আইটি খাতে ব্যয় করলে এখান থেকে আয়ের পাশাপাশি চলমান খরচ আরও বেশি সাশ্রয় করা সম্ভব। এ কথা ব্যংক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের বোঝাতে হবে।
হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ফিনটেক এখন বাস্তবতা। বর্তমানে একটি প্রযুক্তিজ্ঞান-সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছি। এজন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি আত্মস্থ করতে হবে।
আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম বলেন, আর্থিক খাতের অনেক সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করবে ব্লক চেইন। এর মাধ্যমে ভূমি রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট ও কর আদায়, এমনকি ক্ষুদ্রঋণ বিতরণও সহজ হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ব্যাংক ও ফিনটেক প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজ করলে গ্রাহক সেবার মান বাড়বে। গ্রাহকরা নতুন নতুন সেবা উপভোগ করতে পারবে। একই সঙ্গে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। ব্যাংককর্মীদের আইটিতে দক্ষ হতে হবে। আইটিতে দক্ষ না হলে একসময় তিনি ব্যাংক খাতে অযোগ্য হয়ে পড়বেন।