করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিডের প্রাদুর্ভাবের কারণে দুই বছর ধরে ব্যাংকের ঋণ আদায়ে বড় ছাড় দেয়া হয়েছিল; কিন্তু এর পরেও গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে, মূলধন ঘাটতিও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানমতে, ৩১ ডিসেম্বর ১০ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। দুই বছর আগেও আলোচ্য ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ গত দু’বছরে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বেড়েছে আরও ১৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাতটি সরকারি ও তিনটি বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে। মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকির মাত্রা যেমন বাড়ছে, তেমনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যয়।
বিগত দিনে জনগণের অর্থে বিপুল অঙ্কের ঘাটতি পূরণে সরকার অর্থ বরাদ্দ দিলেও এর সুফল পাওয়া যায়নি। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ এখনও বেশি। নানা কায়দায় খেলাপি ঋণ কম দেখানো হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। হঠাৎ করেই খেলাপি ঋণ কমানো কঠিনই বটে। খেলাপি ঋণ আদায়ে তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন ঋণ বিতরণের আগে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। প্রার্থিত খাতে ঋণ যথাযথভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পরিচালন ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের অপচয় রোধ করা গেলে আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মূলধন পরিস্থিতির উন্নতি করা সম্ভব বলেই আমরা মনে করি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ায় এবং খেলাপি ঋণের আধিক্যের কারণে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়েছে। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় এর বিপরীতে প্রত্যাশিত হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি ১০টি ব্যাংক। মূলধন সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (ব্যাসেল-৩ নীতিমালা), ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বছরের পর বছর সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ ব্যাংকগুলো কী ব্যবস্থা নিয়েছে, বা আদৌ ব্যবস্থা নিয়েছে কি না, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তদারক করতে হবে। আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত মেনে নেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর হেরফের হলে ওই ব্যাংককে হয় অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়ে যেতে হবে, অথবা বন্ধ হয়ে যাবে। কোনো ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কীভাবে মূলধন ঘাটতি পূরণ করবে, তার পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিকল্পনা পেশ করে থাকলে সেটির অগ্রগতি কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
মূলধন ঘাটতি মেটাতে প্রতি বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে হাজার হাজার কোটি টাকা দেয় সরকার। জনগণের জমানো টাকা ব্যাংক থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ হিসেবে নেবে গুটিকয়েক ব্যক্তি, ব্যাংক তা আদায়ও করবে না; আবার জনগণের দেয়া করের টাকা নিয়ে মূলধন ঘাটতি মেটাবে রাষ্ট্র এটিও কাম্য নয়। সব বিবেচনায় সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।