দেশের অর্থনীতি মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে ব্যাংক খাত। ব্যাংক মূলত আমানতকারীদের অর্থ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে থাকে। আমানতকারীর অর্থের সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি সেই অর্থলগ্নি করে ব্যাংক নিজের পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করে ও মুনাফার মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে। একই সঙ্গে মুনাফার অর্থ দিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমও পরিচালনা করে। কিন্তু ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অস্থিরতা রোধ করতে না পারলে ব্যাংক খাত আরও জটিল সমস্যায় পতিত হবে বৈকি। চর দখলের মতো যাতে ব্যাংক দখলের মতো ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘মতিঝিলে ব্যাংকে ব্যাংকে বিক্ষোভ হামলা সংঘর্ষ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত রোববার আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তার ছেলেসহ বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিনিধিত্বকারী সব পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করেন ব্যাংকটির চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ এ সরোয়ারের সময়ে ‘অন্যায়ভাবে’ যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের পুনর্বহালের দাবি তোলা হয়েছে। অন্যদিকে দিলকুশায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে গুলির ঘটনা ঘটেছে। সকালে এ ঘটনার সময় ২০১৭ সালের আগে ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এর পরে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। গুলিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
বসেব ঘটনা ব্যাংক খাতের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়। এ কথা সত্যি, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সরকারের মদতপুষ্ট নানা গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করে। এখন সেসব অনুপ্রবেশকারীদের হঠাতে যদি আবারও জোরজবরদস্তির আশ্রয় নেয়া হয়, তাহলে আরও বেশি বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এতে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা হ্রাস পাবে। ফলে ব্যাংকে আমানত কমে যেতে পারে।
জবরদস্তি করে বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদে জায়গা করে নেয়া অনেকেই বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে এমনিতেই ব্যাংক খাতে এক ধরনের অনিশ্চয়তার আবহ রয়েছে। এখন নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পূর্বে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদ্যমান আইনেই সে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। কাজেই এ মুহূর্তে কোনো ধরনের তাড়াহুড়া না করে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা উচিত। আরও একটি বিষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নানা সময়ে চাকরি হারানো অনেকে চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এসব ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক প্রকৃত দোষী ব্যক্তিও রয়েছে। যারা প্রকৃতপক্ষে অনিয়ম করার কারণে চাকরি হারিয়েছেন। কাজেই পরিবর্তিত পরিস্থিতে ওইসব অপরাধী ব্যক্তি যেন কোনো ধরনের সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়েও সজাগ থাকা আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট মহল এসব বিষয় বিবেচনা করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।