Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 4:08 am

ব্যাংকার হওয়ার বড় সুযোগ

আর্থিক খাত বিশেষ করে ব্যাংক খাতের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পরামর্শ সেবার একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। পেশাদারি ব্যাংকিং বিষয়ে শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান এটি। বলা হয়ে থাকে, ব্যাংকিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান বিআইবিএম। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত মাস্টার্স ইন ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (এমবিএম) বর্তমানে ব্যাংকার হওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা পোষণ করা তরুণদের কাছে বিআইবিএমের একটি জনপ্রিয় সাবজেক্ট। যে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের একজন গ্রাজুয়েট ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স (এমবিএম) করে সহজে ব্যাংকে চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন। এমবিএমের শিক্ষাপদ্ধতি বহুলাংশে প্রায়োগিক হওয়ায় এর শিক্ষার্থীরা ব্যাংকিংয়ে দক্ষ হওয়ার সুযোগ বেশি পান। এছাড়া তারা ব্যাংক খাতের দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান।
এমবিএমের সাবেক সব শিক্ষার্থী সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। শিক্ষার্থীদের পঞ্চম সেমিস্টার শেষ হলেই বিআইবিএমে জব ফেয়ারের মাধ্যমে ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে সরাসরি নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ২২টি ব্যাচের এক হাজারের বেশি সাবেক শিক্ষার্থী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। মূলত বিআইবিএমের দুই বছর মেয়াদি এমবিএম কোর্সটি করা থাকলে ব্যাংক সেক্টরে চাকরি পাওয়া সহজ হয়। এছাড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ব্যাংকের পক্ষ থেকে বৃত্তি দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, কোনো শিক্ষার্থী এমবিএমে ভর্তি হলে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে তাকে সুযোগ্য ব্যাংকার হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এ কারণে হাই কোয়ালিটির এসব মেধাবী শিক্ষার্থী বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে সব সময় অগ্রাধিকার পায়। তিনি আরও বলেন, এটিউ বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রায়োগিক ও তাত্ত্বিকের সমন্বয় করে পড়ানো হয়।
ঢাকা স্কুল অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (ডিএসবিএম) আওতায় পরিচালিত হয় এমবিএম কোর্স। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসবিএমের পরিচালক মোহাম্মদ মহীউদ্দিন ছিদ্দিকী বলেন, গবেষণা ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্নভাবে বিআইবিএম ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত। এমবিএমের কোর্স কারিকুলামে তা প্রয়োগ করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ব্যাংকিংয়ের বাস্তব জ্ঞান পায়, যা পরবর্তী চাকরিজীবনে সাফল্য বয়ে আনে।
বিআইবিএমের এমবিএমে নতুন ব্যাচ ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেকোনো বিষয়ে স্নাতক উত্তীর্ণরা এমবিএমে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তার মোট স্কুলিং টাইম হতে হবে কমপক্ষে ১৬ বছর। ভর্তির আবেদনের জন্য শিক্ষাজীবনে কমপক্ষে একটি প্রথম বিভাগ থাকতে হবে এবং কোনো তৃতীয় বিভাগ থাকলে হবে না। স্নাতকদের প্রথম বিভাগ ধরা হবে সিজিপিএ ৩.৫০ থেকে আর এসএসসি ও এইচএসসির ক্ষেত্রে ৪.০০-এর ওপরে প্রথম বিভাগ এবং ৩.০০ থেকে ৪.০০ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিভাগ ধরা হবে। প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বরে ভর্তি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এছাড়া একই যোগ্যতায় এমবিএম (ইভেনিং) কোর্সে প্রতিবছর এপ্রিলে একটি ব্যাচ ভর্তি করা করানো হয়। এ বছর নতুন সেশনে ৫ নভেম্বরের মধ্যে ভর্তির আবেদন করতে হবে। ১০ নভেম্বর হবে ভর্তি পরীক্ষা।
বিআইবিএমের এমবিএমের সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে উচ্চপদে কর্মরত ও এমবিএম অ্যালামনাই সোসাইটির সাবেক সভাপতি এসএম ওয়ারী উল মোর্শেদ বলেন, এমবিএমের কারিকুলাম ওয়েল ডিজাইন্ড। এখানে শিক্ষার্থীরা রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, কমার্শিয়াল ব্যাংকিং, ট্রেড সার্ভিস ও ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টের মতো বিষয় পড়ে আসে। এ কারণে চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা ব্যাংকের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়।
শুরুতে ব্যাংক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল বিআইবিএমের লক্ষ্য, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই লক্ষ্যের বিস্তার হয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি উঠতি নতুন ও উদ্যমী শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য চালু হয়েছে অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রাম মাস্টার্স ইন ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (এমবিএম)। তাই যারা ব্যাংকিংকে পেশা হিসেবে নিতে চান তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে এই কোর্সটি।
এমবিএম প্রোগ্রামের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে দুই বছরে ২০টি বিষয়ে ৬৬ ক্রেডিট সম্পন্ন করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে ফান্ডামেন্টাল কোর্স, স্পেশালাইজড কোর্স, ক্যাপসটন কোর্স ও ইলেক্টিভ কোর্স। এছাড়া কোর্স ওয়ার্ক, প্রজেক্ট পেপার ও মৌখিক পরীক্ষা রয়েছে। চার মাস মেয়াদি মোট ছয়টি টার্মে এই কোর্সগুলো সম্পন্ন করতে হয়।
সবাইকে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে আসতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদনকারীকে ১৫০ মিনিটের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। পরীক্ষার মধ্যে ৯০ মিনিট বরাদ্দ থাকে এমসিকিউ বা নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য এবং ৬০ মিনিটের মধ্যে লিখিত প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। নৈর্ব্যক্তিক অংশের প্রশ্ন করা হয় ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সি ও ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটির বিভিন্ন অংশ থেকে। লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীর ফ্রি হ্যান্ড ইংরেজি লেখার ওপর দক্ষতা যাচাই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় প্রথম ২০০ প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ৫০ থেকে ৮০ জন ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।