ব্যাংকিং খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে এজেন্ট ব্যাংকিং

নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দুর্বলতাগুলোকে দূর করে গ্রাহকদের সরাসরি সম্পৃক্ততায় এজেন্ট ব্যাংকিং হতে পারে ব্যাংকসেবা সম্প্রসারণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। গতকাল রাজধানীর বিআইবিএম অডিটরিয়ামে ‘এজেন্ট ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে কার্যকারিতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি। বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের চেয়ার অধ্যাপক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক ইয়াছিন আলী, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ গ্রাহক ছোট ব্যবসায়ী, ১৮ শতাংশ গৃহিণী, ১৫ শতাংশ চাকরিজীবী, ৭ শতাংশ গ্রাহক শিক্ষার্থী। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়ায় কৃষকদের মধ্যেও এজেন্ট ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে মোট গ্রাহকের ৭ শতাংশ কৃষক। এমনকি ৩ শতাংশ দিনমজুরও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে তাদের হিসাব খুলেছে।

অঞ্চলভিত্তিক জনপ্রিয়তা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। মোট গ্রাহকের ২৪ শতাংশ এ অঞ্চলের বাসিন্দা। এর পরেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। মোট গ্রাহকের ১৮ শতাংশ গ্রাহক চট্টগ্রামের বাসিন্দা। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রাজশাহী। এছাড়া সবচেয়ে কম জনপ্রিয় সিলেট বিভাগ। সেখানে মাত্র ৫ শতাংশ গ্রাহক এ সেবা গ্রহণ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালের জুনে ব্যাংকিং খাতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয়। এখন পর্যন্ত ১২টি ব্যাংক আড়াই হাজার এজেন্টের মাধ্যমে এ ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট সংখ্যা সর্বোচ্চ। ডিবিবিএল দেশের সব জেলার ৪৭০টি উপজেলায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংক এশিয়া ৫৩টি জেলার ২২২টি উপজেলায়, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ২২টি জেলার ৪১টি উপজেলা এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১৩টি জেলার ১৫টি উপজেলায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, ব্যাংকিংসেবার বাইরে থাকা এ দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে এজেন্ট ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছেÑবিষয়টি ইতিবাচক। তিনি আরও বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন এমন ৮২ শতাংশ গ্রাহকই গ্রামের বাসিন্দা। যারা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এজেন্ট ব্যাংকিংকে আরও প্রসারিত ও জনপ্রিয় করতে হলে এর ব্যয় কমাতে হবে। তিনি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স গ্রহণ করা সব ব্যাংককে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ তার বক্তব্যে বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নিরাপত্তার সব দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেই নিতে হবে। তিনি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কেউ যে গোপনে এজেন্ট ব্যাংকিং না করতে পারে, সে জন্য ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটকে খেয়াল রাখতে হবে।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন তার বক্তব্যে বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি কার্যক্রম চলার কারণে রেমিট্যান্স ১৭ শতাংশ কমে গেছে। এ কারণে এজেন্ট ব্যাংকিংকে জনপ্রিয় করার কোনো বিকল্প নেই। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের চেয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং নিরাপদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করতে হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যা সম্ভব নয়।

এজেন্ট ব্যাংকিংকে নিরাপদ রাখতে এজেন্টদের অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং জ্ঞান নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোর দেন বক্তারা। এক্ষেত্রে শিক্ষিত ও আস্থাভাজন এজেন্ট নিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয় বৈঠক থেকে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০