ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যবসা হলো মানুষের বিশেষ করে গ্রাহক-আস্থা। আমাদের ব্যাংক খাতে সংঘটিত কেলেঙ্কারির কারণে আস্থায় চিড় ধরেছে গ্রাহকের। তা পুনরুদ্ধার করা সময়সাপেক্ষ বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। কেননা বাস্তবতা হলো কোনো অনিয়ম-কেলেঙ্কারির কথা বিস্মৃতির অতলে যেতে না যেতেই নতুন কোনো কেলেঙ্কারি উদ্ঘাটিত হয়। সাদা চোখে বড় অঙ্কের কেলেঙ্কারিই আমাদের মনে পড়ে। কিন্তু অব্যবস্থাপনায় ছোট অঙ্কের কেলেঙ্কারিও কম সংঘটিত হয় না। বড় কোনো অনিয়ম গণমাধ্যমে এলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নড়েচড়ে বসে, প্রতিকারে ব্যবস্থাও নেয়। ছোট বিষয় খোদ গ্রাহকও চেপে যান। একাধিক ঘটনা ঘটলে বড়জোর ব্যাংক পরিবর্তন করেন। তবে ছোট ঘটনা এড়িয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মধ্যে একধরনের ঢিলেমিও দেখা দিতে পারে। তাদের মনে ধারণা জন্মে, লঘু পাপে তো গুরুদন্ড হবে না। কিন্তু তুচ্ছ বিষয়ও একসময় গ্রাহকদের মনে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের সঞ্চার করতে পারে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণাই মহাদেশ গড়ে তোলে।
গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, এটিএম বুথে লেনদেনে গ্রাহকের পকেট কাটছে ডাচ্-বাংলা। কিন্তু গ্রাহকের ভোগান্তির বিষয়ে কথা বলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, নিজস্ব বুথেই প্রতি লেনদেনে পাঁচ টাকা কেটে নিচ্ছে ব্যাংকটি, অথচ তা গ্রাহক জানেন না। এমনকি তিন মাস আগে থেকে মাশুল নেয়া হলেও তা গোপন রাখা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা একে ‘ডিজিটাল ডাকাতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
খবরে বলা হয়েছে, তিন মাস আগে থেকে এমন ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আমাদের মনে হয় আরও আগে থেকেই এমন অনিয়ম চলে আসছে। তাই বলা যায়, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক গ্রাহকদের অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না।
আমরা মনে করি, সুশাসন ও জবাবদিহি থাকলে ব্যাংকটি গ্রাহকের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারত না। এটি ব্যাংকিং সেবার পরিপন্থী। বলা হয়ে থাকে, নৈতিকতার চর্চা না করায় ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার বাড়ে, দেখা দেয় তারল্য সংকট। কিন্তু এগুলো বড় বিষয়। সাধারণ গ্রাহক এসব ভারী বিষয় বোঝেন না। তারা বোঝেন, ব্যাংক ব্যবসায় পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা। ব্যাংক গ্রাহকের বিশ্বাসের মর্যাদা না দিলে তারা যাবেন কোথায়? আরেক ব্যাংকে! সেখানেও ঘটতে পারে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অনেক সেবা এখন অটোমেশনের আওতায়। পর্যাপ্ত স্থিতি না থাকলে অর্থ উত্তোলন করা যায় না। কিন্তু যখন-তখন অর্থ কেটে নেয়া হবে, আর এজন্য জবাবদিহি করতে হবে না। এমন হলে ব্যাংকের প্রতি আস্থা হারাবে সাধারণ মানুষ। গ্রাহক আস্থা যাতে ক্ষুন্ন না হয়, সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককেই ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রাহকদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। সেবার বিনিময়ে ব্যাংক চার্জ নেবে। তা হতে হবে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে। ব্যাংক টাকা কেটে নেবে, গ্রাহককে তা জানানো হবে না এটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবশ্যই তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।