অর্থনীতির দুটি খাত হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি। সরকারি খাতে সরকার রেভিনিউ সংগ্রহ করছে এবং তা ব্যয় করছে, ফলে অর্থনীতিতে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেটা দেশের মোট জিডিপিতে প্রকাশ পাচ্ছে। আর বেসরকারি খাতটি তেমন সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। কোনো ব্যাংক ১০ বা ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ আমানত সংগ্রহ করে যদি কোনো কোম্পানিকে ১৩ থেকে ১৫ শতাংশে ঋণ দেয়। এখন ওই কোম্পানিকে কর দেওয়ার পর ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ লাভ করতে হবে। এটা সবসময় অর্জিত হয় না। পরে দেখা যায়, ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য ওই কোম্পানিকে আবার ঋণ নিতে হচ্ছে। এভাবে কোম্পানিগুলো ঋণখেলাপি হয়ে যাচ্ছে। এতে চাপ সৃষ্টি হয় ব্যাংকগুলোতে। যখন ব্যাংকগুলোর আয় কম হয় তখন পুঁজিবাজারে তার প্রভাব পড়ে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মোহাম্মদ আলী, এফসিএ এবং পুঁজিবাজার টেকনিক্যাল এনালিস্ট মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ।
মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রতি বছর বাজেটেই পুঁজিবাজার নিয়ে প্রত্যাশা থাকে। তবে এবার বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে কিছু প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সেটা হয়তো সরকার বিবেচনা করবে। বর্তমানে মানি মার্কেটের যে সমস্যা তা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পুঁজিবাজারের সমস্যা হচ্ছে, বাজারে যেসব কোম্পানি আসে সেগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নৈতিকতার অনেক অভাব রয়েছে। আবার অনেক বিনিয়োগকারীর বাজার সম্পর্কে দক্ষতার অভাব রয়েছে। অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালোভাবে না বুঝে মার্জিন ঋণ নিচ্ছে এবং অন্যজনের কথা শুনে শেয়ার কেনাবেচা করছে। আবার অনেকে অন্যজনের কথায় লাখ টাকা বিনিয়োগ করছে। যখন ওই কোম্পানির শেয়ারদর কমে যায় তখনই বাজার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা শুরু করে। আমরা যদি অর্থনীতির কথা বিবেচনা করি, অর্থনীতির দুটি খাত, একটি হচ্ছে সরকারি, অন্যটি বেসরকারি। সরকারি অর্থনীতিতে সরকার রেভিনিউ সংগ্রহ করছে এবং তা থেকে ব্যয় করছে, ফলে অর্থনীতিতে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেটা দেশের মোট জিডিপিতে প্রকাশ পাচ্ছে। আর বেসরকারি খাতটি তেমন সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। কোনো ব্যাংক ১০ বা ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ আমানত সংগ্রহ করে যদি কোনো কোম্পানিকে ১৩ থেকে ১৫ শতাংশে ঋণ দেয়। এখন ওই কোম্পানিকে ট্যাক্স দেওয়ার পর ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ লাভ করতে হবে। আসলে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ লাভ স্থিতিশীল থাকে না। পরে দেখা যায় ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য ওই কোম্পানিকে আবার ঋণ নিতে হচ্ছে। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলো ঋণখেলাপি হয়ে যাচ্ছে। এতে চাপ সৃষ্টি হয় ব্যাংকলোতে। যখন ব্যাংকগুলো আয় কম হয় তখন সেই চাপ পুঁজিবাজারে পরে। এখানে মূল কারণ হচ্ছে যখন অর্থনীতিতে সুদের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন বাজার ভালো থাকে, আবার যখন সুদের পরিমাণ কমে যায় তখন বাজার ভালো হয় অর্থাৎ কোম্পানিগুলো ভালো করে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সুদের পরিমাণ সিঙ্গেল ডিজিটে আনার জন্য। পুঁজিবাজারকে ভালো করতে হলে এ বিষয়গুলো চিন্তা করতে হবে।
মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সূচক ৫৯৯২ থেকে ৫১৭০ নেমেছিল। অর্থাৎ ৮২২ পয়েন্ট পড়েছে। বর্তমানে সূচক রয়েছে পাঁচ হাজার ৩৮০ পয়েন্টে। আশা করি সামনে সূচক বাড়বে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দুই ধরনের বিনিয়োগকারী রয়েছে। এক ধরনের বিনিয়োগকারী মনে করে বাজার সবসময় বাড়বে। যেমন বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে প্রণোদনা থাকবে তখন বিনিয়োগকারীরা মনে করে বাজার ভালো হবে, আবার যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরি পলিসি ইতিবাচক হয়, তাহলে বাজার ইতিবাচক হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ