নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দাপট দেখিয়েছে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো। ব্যাংক কোম্পানিগুলোর দাপটের দিনেও পুঁজিবাজারে ঢালাও দরপতন হয়েছে। ফলে ব্যাংকের দাপটের পরও পুঁজিবাজারে মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার চারগুণের বেশি। তবে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে সিংহভাগ ব্যাংক। এর মধ্যে একাধিক ব্যাংকের শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। তারপরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ৯৭ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
গতকাল পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। কিন্তু অন্যান্য খাতের প্রায় সবক’টি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয় শুরুতেই। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৬০ পয়েন্ট কমে যায়। লেনদেনের শুরুতে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখানো ব্যাংক খাত, লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সেই ধারা ধরে রাখে।
ব্যাংক কোম্পানিগুলো একদিকে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখাতে থাকে, অন্যদিকে ঢালাও দরপতন হতে থাকে অন্যান্য খাতের। ফলে দাম কমার তালিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি সবক’টি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৭২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯৯টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে ২৭টি ব্যাংকের শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ৬টির শেয়ার দাম কমেছে।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা চারটি ব্যাংকের শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। এমনকি লেনদেনের বেশির ভাগ সময় এই চার ব্যাংকের বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে। বিপরীতে দিনের সর্বোচ্চ দামে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনার আদেশ আসে। এই চার ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ার দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯৭ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৬৩৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করে।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭৯৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২৬৬ কোটি ৮ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে বেশি অবদান ছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের। কোম্পানিটির ৪০ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইসলামী ব্যাংকের ৩৫ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৩১ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে ছিল গ্রামীণফোন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ছিলÑ ব্র্যাক ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা, সোনালি আঁশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিক হোটেল এবং এমজেএল বাংলাদেশ।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২০৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হওয়া ২২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৮টির এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা।