নিজস্ব প্রতিবেদক: নভেল করোনা ভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাÐ। এই সময়ে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ব্যাংকের মাধ্যমে এ সুবিধা বিতরণ করা হবে। কিন্তু দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংক খাতের সেই সক্ষমতা নেই। এজন্য ব্যাংকগুলোর ঋণদান সক্ষমতা বাড়াতে করতে বিশেষ ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দৈনিক নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে অর্থ নিতে সুদের হার কমানো হয়। এই সুবিধার আওতায় ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের সরবরাহ বাড়বে।
বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে এখন থেকে ৪ শতাংশ হারে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) রাখতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য নেওয়া ধারের সুদহার বেসিস পয়েন্ট ৫০ শতাংশ কমিয়ে পাঁচ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে গত ২৩ মার্চ সিআরআর দশমিক ৫০ এবং রেপোর সুদহার বেসিস পয়েন্ট ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছিল।
প্রতিদিন ঋণ বিতরণ ও আমানত আদায়ের ভিত্তিতে সিআরআর নির্ধারিত হয়ে থাকে একটি ব্যাংকের। আমানতকারীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয়। এর মধ্যে একটি অংশ রাখতে হয় নগদে যাকে সিআরআর বলে। বাকি অংশ রাখতে হয় বিভিন্ন বিল ও বন্ডের বিপরীতে।
দুটি মিলে গত ১ এপ্রিল থেকে প্রচলিত ধারার সুদ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে ১৮ শতাংশ এবং ইসলামি ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ১০ শতাংশ হারে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। আরও এক শতাংশ কমায় এখন থেকে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে ১৭ এবং ইসলামি ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৯ শতাংশ হারে সংরক্ষণ করতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, গত ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোকে দ্বি-সাপ্তাহিক ভিত্তিতে মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম সাড়ে চার শতাংশ নগদ জমা রাখতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় তারল্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে দ্বি-সাপ্তাহিক ভিত্তিতে তা চার শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে সাড়ে তিন শতাংশ রাখতে হবে।
অন্য এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদহার বিদ্যমান বার্ষিক শতকরা পাঁচ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বেসিস পয়েন্ট ৫০ শতাংশ কমিয়ে পাঁচ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। এ নির্দেশনা আগামী ১২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। এর আগে গত ২৩ মার্চ রেপোর সুদহার বেসিস পয়েন্ট ২৫ শতাংশ কমিয়ে পাঁচ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়।
নতুন নির্দেশনার ফলে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগের চেয়ে কম পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করতে হবে। ফলে উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংক ঋনদানে ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের পরিমাণ বাড়বে। করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যাংকে অর্থের চাহিদা বেড়েছে। সেই বিবেচনা ও সহজে ব্যবসায়ীদের হাতে অর্থ পৌঁছে দিতে এ সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এতে অর্থের সরবরাহ বাড়বে।