আমাদের বাজারে ব্যাংক খাতের আধিপত্য বেশি। সে দিক বিবেচনায় কিছুদিন আগে বাজারের আচরণ খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এবারের মুদ্রানীতিতে এডি রেশিও (অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও) কিছুটা কমিয়ে দেওয়ায় বাজারের এমন অবস্থা হয়েছিল। এতে বেশ কিছু ব্যাংক একসঙ্গে ডিপোজিটর সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ডিপোজিট রেট এখন ৮-৯ শতাংশ হয়ে গেছে। কেউ আবার ৯ শতাংশের ওপরেও দিচ্ছে, যারা কিনা এক সময় ছয় শতাংশও দিত না। যে কারণে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়েছে। গতকাল হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি আলোচিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বালি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ সিরাজ উদ দৌলা এবং আমার স্টক লিমিটেডের ইনভেস্টমেন্ট অ্যানালিস্ট আসাদ উল ইসলাম।
সৈয়দ সিরাজ উদ দৌলা বলেন, ডিসেম্বরে বছর শেষ হয়ে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় ডিভিডেন্ড ঘোষণার সময়। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোর। আর আমাদের বাজারে ব্যাংক খাতের আধিপত্য বেশি। সে দিক বিবেচনায় বর্তমানে বাজারের এমন আচরণ খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এবারের মুদ্রানীতিতে এডি রেশিও কিছুটা কমিয়ে দেওয়ায় বাজারের এমন অবস্থা হয়েছিল বলে মনে করি। এতে বেশ কিছু ব্যাংক একসঙ্গে ডিপোজিটর সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। লক্ষ করলে দেখবেন, ডিপোজিট রেট এখন ৮-৯ শতাংশ হয়ে গেছে। কেউ আবার ৯ শতাংশের ওপরেও দিচ্ছে, যারা কিনা এক সময় ছয় শতাংশও দিত না। যে কারণে এর একটি প্রভাব বাজারে পড়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, বিএসইসির চেয়ারম্যান, মন্ত্রণালয়সহ সবাই মিলে একটি মিটিংয়ের আয়োজন করেছিল। মিটিংয়ে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ব্যাংকগুলোর সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও) এক শতাংশ কমানো হয়েছে। মানে আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে যে ৬০-৬৫ হাজার কোটি টাকার মতো আমানত রাখতে হতো, ব্যাংকগুলোর এখন তার থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা কম রাখতে হবে। এছাড়াও আরও কিছু পরিবর্তন এসেছে এ মিটিংয়ে। যে কারণে বাজারে তার একটি ইতিবাচক প্রভাব আমরা লক্ষ করছি।
অনুষ্ঠানে আসাদ উল ইসলাম বলেন, দেশের পুঁজিবাজার অর্থের থেকে বেশি গতিবিধি হয় মানুষের আবেগপ্রবণ বা অনুভূতির কারণে। একজন ব্যক্তির কাছে অর্থ যতই থাকুক, কিন্তু তার যদি একটি পণ্য বা বাজার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা থাকে, তাহলে তিনি আর ওই পণ্যটি কেনেন না। পুঁজিবাজারেও একই বিষয় কাজ করে। কেউ যদি ধারণা করেন যে, সামনে পুঁজিবাজার নিচের দিকে ধাবিত হবে; তাহলে তিনি আর বাজারে বিনিয়োগ করবেন না। আর এটি ফান্ড ম্যানেজার, বিদেশি ফান্ড ম্যানেজার, আইসিবি, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, বড় বড় মিউচুয়াল ফান্ডসহ সবার জন্য সত্য। বর্তমানে সবার মধ্যে হয়তো আবার বাজারের প্রতি সেই ইতিবাচক অনুভূতি ফিরে এসেছে। যে কারণে বেশ কিছুদিন পুঁজিবাজার নেতিবাচক ধারায় থাকার পর সম্প্রতি বাজার আবার ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় বাজারে এখন জ্ঞানভিত্তিক বিনিয়োগ করতে হবে গুজবভিত্তিক নয় এবং বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আরও সচেতন হতে হবে। কোনো শেয়ারে বিনিয়োগের আগে সেটির অতীত ও বর্তমান দর বিবেচনা করে বিনিয়োগ করতে হবে। দেখা যায় অনেক কোম্পানির শেয়ার কয়েক মাসের ব্যবধানে ১০ টাকা থেকে ১০০-১৫০ টাকা হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে এসব শেয়ার থেকে বিনিয়োগকারীদের দূরে থাকাই ভালো। কারণ এগুলোর যে কোনো সময়ই পতন ঘটতে পারে। তাছাড়া আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা একটু দেরিতেই বিনিয়োগ করেন। দেখা যায় শেয়ারদর বেড়ে যাওয়ার পর তারা বিনিয়োগে সক্রিয় হন। কাজেই এ বিষয়গুলোতে বিনিয়োগকারীদের আরও সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করি।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম