ব্যাংকের জালিয়াতি বন্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিন

আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থায় কত ধরনের জালিয়াতি-কেলেঙ্কারি রয়েছে, তা কমবেশি সবার জানা। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি এবং অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট গ্রুপ প্রভৃতি অব্যবস্থাপনার পর নতুন কেলেঙ্কারির খবর আসছে। ফলে এ খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায় চির ধরেছে অনেক আগেই।

বড় অঙ্কের আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা ‘স্মরণীয়’ হয়ে থাকে। সেভাবে মনে না থাকলেও অন্য অনিয়মও কম নয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ব্যাংক মাঝেমধ্যেই একই পণ্যের মূল্য গ্রাহককে দুবার পরিশোধ করে। এক বছর চার মাসে একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে ১৪ বার ব্যাংকটি। আবার দোষ ঢাকতে ফোর্সড লোনও তৈরি করা হয়। ব্যাংকটির নিজস্ব তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল শেয়ার বিজ মারফত আমরা জেনেছি, ‘একই জমি বন্ধক রেখে দুই ব্যাংক থেকে ঋণ’ নেয়ার ঘটনা। খবরে জানা যায়, সম্পত্তির মূল কাগজপত্র ছাড়াই ঋণ অনুমোদন করেছে অগ্রণী ব্যাংক। এতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। প্রথম ঋণ দিয়েছিল বেসরকারি পূবালী ব্যাংক। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ঋণ অনুমোদন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। একই জমির কাগজ দেখিয়ে পূবালী ও অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান স্টাইলক্র্যাফট। বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি জানালেও নানা তদবির ও সুপারিশের মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে মোট ৩৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে অগ্রণী ব্যাংক।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণে এসব অনিয়ম উঠে এসেছে। স্বতঃপ্রবৃত্ত হোক আর বাধ্য হয়ে হোক, ব্যাংক কর্মীদের যোগসাজশ ছাড়া কোনো অনিয়ম সংঘটিত হতে পারে না। এখন ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে অনলাইনে, ম্যানুয়ালি নয়। তাৎক্ষণিক যে কোনো তথ্য হালনাগাদ করা সম্ভব। অটোমেশনের এ যুগে ‘একই জমি বন্ধক রেখে দুই ব্যাংক থেকে ঋণ’ নেয়ার ঘটনাকে আমরা কী ধরনের জালিয়াতি বলব। মহামারি কভিডকালে সম্মুখসারির যোদ্ধার ভূমিকায় ছিলেন ব্যাংকাররা। গত বছরের এপ্রিলে যখন সাধারণ ছুটি চলছিল, তখনও ব্যাংকগুলো খোলা ছিল। ওই সময় অনেকে চাকরিচ্যুতও হয়েছেন। তাদের প্রতি সমব্যথী হয়ে চাকরি দ্রুত পুনর্বহাল করার জোর দাবি জানিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তাদের উদাসীনতা-অনিয়মে হতাশ হই। একজন সাধারণ মানুষ যখন সেবা নিতে বিশেষ করে ঋণ নেয়ার জন্য ব্যাংকে যান, তাদের আইন সম্পর্কে ধারণা দেন ব্যাংকাররা। কতবার যে ‘নো ইওর ক্লায়েন্ট’ ফরম পূরণ করতে হয়, ছবি-দস্তখত জমা দিতে হয়!

স্টাইলক্র্যাফটকে ঋণ দিতে সম্পত্তির মূল দলিল গ্রহণ, রাজউকের অনাপত্তি, পূবালী ব্যাংকের অনাপত্তি, এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এসব নির্দেশনা পরিপালনে দায়িত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঋণগ্রহীতা স্টাইলক্র্যাফটকে ‘মানসম্মত’ পোশাক কোম্পানি আখ্যা দিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী। ব্যাংকে কী ধরনের জালিয়াতি সংঘটিত হয়, তা ব্যাংকারদের জানা, জানে নিয়ন্ত্রক সংস্থাও। ব্যাংকগুলো যাতে ঝুঁকি পর্যালোচনা ছাড়াই ঋণ না দিতে পারে, সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করে ব্যাংক খাতকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০