Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:27 am

ব্যাংকের তারল্য সংকটে কোনো প্রস্তাবই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়

মানি মার্কেটে এখন তারল্য সংকট বিরাজ করছে। যদি ব্যাংকে তারল্য সংকট থাকে তাহলে যত বিনিয়োগকারী ভালো প্রস্তাব নিয়ে যাক না কেন ব্যাংকগুলো টাকা দিতে পারবে না। অনেক বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে, যেখানে অনেক ভালো ভালো উদ্যোক্তার প্রস্তাব বোর্ডে পাস হয়ে রয়েছে; কিন্তু ব্যাংকগুলো তাদের টাকা দিতে পারছে না। ব্যাংকে যদি তারল্য সংকট থাকে, তাহলে পুঁজিবাজারে টাকা আসবে কোথা থেকে। কারণ পুঁজিবাজার ও মানি মার্কেট একে ওপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফিনিক্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক ও সাবেক এমডি এ কাদির চৌধুরী এবং ইআরএফের সাবেক প্রেসিডেন্ট সুলতান মাহমুদ।
এ কাদির চৌধুরী বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি বিশেষ করে ভারতের অর্থনীতি খুব খারাপ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। চীনের অর্থনীতি ধীরগতিতে এগোচ্ছে অর্থাৎ তাদের জিডিপি প্রায় ছয় দশমিক আট শতাংশে নেমে আসছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে বেক্সিট ইস্যু নিয়ে সমস্যা চলছে এবং বিশ্বে রাজনৈতিক অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে তাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির একটি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে গার্মেন্ট খাতে আমদানি ও রফতানি, আইটি খাত, মানব সম্পদসহ আরও অনেক বিষয়ে। যদি বিশ্ব অর্থনীতিতে কোনো সমস্যা তৈরি হয়, সেটার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা পড়বে। বিশেষ করে ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে ইউরোপিয়ন ইউনিয়নে প্রকট সমস্যা সৃষ্টি হলে আমাদের আরএমজি খাতে প্রভাব পড়বে। এছাড়া তেলের দাম আরও কমে যেতে পারে। যদি তেলের দামের ওপর প্রভাব পড়ে, সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতে প্রকট সমস্যা সৃষ্টি হবে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনীতির কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে সেটির প্রভাব দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে পড়ে। কারণ আমাদের দেশ বিভিন্নভাবে বিশ্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। বিশেষ করে, দেশের রফতানি খাত বাধাগ্রস্ত হবে। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে বড় সমস্যায় পড়ব আমরা। সেখান থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসে। কারণ মধ্যপ্রাচ্য সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। যদি সমস্যা সৃষ্টি হয় সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা চাকরিচ্যুত হবেন। আবার শোনা যাচ্ছে অনেক শ্রমিক নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে এখন থেকে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে এ ধরনের সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, মানি মার্কেটে এখন তারল্য সংকট বিরাজ করছে। যদি ব্যাংকে তারল্য সংকট থাকে, তাহলে যত ভালো বিনিয়োগকারী ভালো প্রস্তাব নিয়ে যাক না কেন ব্যাংকগুলো টাকা দিতে পারবে না। অনেক বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে যেখানে অনেক ভালো ভালো উদ্যোক্তার প্রস্তাব বোর্ডে পাস হয়ে রয়েছে, কিন্তু ব্যাংকগুলো তাদের টাকা দিতে পারছে না। অর্থাৎ এ রকম নাজুক অবস্থা বিরাজ হচ্ছে ব্যাংকগুলোতে। ব্যাংকে যদি তারল্য সংকট থাকে, তাহলে পুঁজিবাজারে টাকা আসবে কোথা থেকে। কারণ পুঁজিবাজার ও মানি মার্কেট একে ওপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখন ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যয় অনেক বেড়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ব্যাংকগুলোর বাড়তি ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। আসলে হঠাৎ করে ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। আবার সব ব্যাংকের ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য অর্থাৎ আমানতের সুদহার ছয় শতাংশ ও লোনের সুদহার ৯ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আসলে এটি কতটুকু সম্ভব হবে, আমার জানা নেই।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ