Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:55 pm

ব্যাংকের দুরবস্থা রোধে উদ্যোগ নিতে হবে

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

‘বিগত কয়েক বছরের অনুসন্ধান করলে দেখবেন সরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে, কিন্তু সে অনুপাতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়েনি। ফলে এ বছর সামষ্টিক অর্থনীতি কিছুটা ভালো করলেও ব্যক্তি খাত পিছিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকে দুরবস্থা বিরাজ করছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় পুঞ্জীভূত অর্থ বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া, আর সিন্ডিকেশন ছাড়া বড় ঋণ না দেওয়া।’ গতকাল এমন মত দিয়েছেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভিতে আসা পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন এনবিইআরের চেয়ারম্যান ড. এহসানুল আলম পারভেজ এবং ব্যাংক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আনিসুর রহমান, এফসিএ।

ড. এহসানুল আলম পারভেজ বলেন, এ বছর সামষ্টিক অর্থনীতিতে আমরা ভালো করেছি। তবে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ আরও ভালো করা উচিত ছিল। এ খাতে বিনিয়োগ কম হয়েছে। আর বিনিয়োগ কম হলে কর্মসংস্থানও কম হয়েছে। তাছাড়া একটি প্রতিবাদ তরুণদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। তারা চাকরির ব্যাপারে আন্দোলনেও যেতে পারে। আমি চাইব বর্তমান সরকার আগামী বছর ব্যক্তিমালিকানা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে এবং ব্যাংকগুলো থেকে সরকার নিজেরা যেন লোন না নেয়। তাছাড়া ব্যক্তি খাতের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাপকভাবে কাজ না করলে এর প্রভাব নির্বাচনে পড়বে। লক্ষ করলে দেখবেন দেশের বাজারে বেচাকেনা নেই। দেশে পাঁচ হাজারের মতো মানুষের কাছে ৮৫ শতাংশ অর্থ এসে পুঞ্জীভূত হয়ে গেছে। উন্নয়ন কাজ বা কর্মসংস্থান যে কোনোভাবেই হোক না কেন এ অর্থ ছড়িয়ে দিতে হবে। তাছাড়া দেশের অর্থনীতিকে উল্লম্ফন করাতে হলে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথম করণীয় হচ্ছে, সিনডিকেশন ছাড়া একক বড় ঋণ যেন আর একটিও দেওয়া না হয়। অন্যদিকে ব্যাংকে ছোট ও মাঝারি লোন হচ্ছে না। ব্যাংকের এই খারাপ অবস্থায় নতুন করে তিনটি ব্যাংক আবার আসতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধা দিলেও তাদের আমি বেশি সাধুবাদ দেব না, কারণ তারাও একসময় টাকার বিনিময়ে রাজি হয়ে যাবে। অর্থাৎ যাদের দেখার কথা তারাও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ব্যাংকের ১০ হাজার কোটি টাকার মতো অর্থ লোপাটের পর তাকে শাস্তি হিসেবে চেয়ার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এমন হলে তো সবাই বড় অর্থ হাতিয়ে নিয়ে চেয়ার থেকে সরে যেতে চাইবে।

মো. আনিসুর রহমান বলেন, সচেতন নাগরিকমাত্রই জানেন দেশে বিনিয়োগ হার মোট দেশজ উৎপাদের (জিডিপি) ২৮-২৯ শতাংশ। যদি সরকারি অবকাঠামগত বিনিয়োগ বেড়ে যায় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, সরকার বাড়িয়েছে ঠিকই। কিন্তু ব্যক্তি খাতে কোনো উন্নতি হচ্ছে না।

তিনি বলেন, গত দু-তিন মাসে খাদ্য আমদানি বেড়েছে। অথচ এর ঠিক কয়েক মাস আগে আমরা স্বাবলম্বী ছিলাম। গত আট-নয় বছরে প্রথম একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবার হলো। এতে হাওর অঞ্চলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই আট-নয় বছরে বর্তমান সরকারকে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়নি। এবার হয়েছে, তাও আবার আংশিক। এই আংশিকেই কিন্তু একটি সংকট হয়ে গেছে নির্ধারিত আয়ের ব্যক্তিদের ওপর এবং তারা প্রকৃতপক্ষেই সমস্যায় পড়েছেন। অন্যদিকে যারা পড়াশোনা শেষ করে বের হচ্ছে, তাদের কর্মসংস্থান যদি তৈরি করতে না পারি তাহলে এ দুই সমস্যার সমন্বয়ে দেশের অর্থনীতিতে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম