নিজস্ব প্রতিবেদক: সুযোগ থাকলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল কমিশনের কার্যালয়ে এ নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম।
বিএসইসির কমিশনার শেখ মোহাম্মদ শামছুদ্দিন আহমেদ এ বৈঠক আহ্বান করেন। সভায় জানানো হয়, প্রতিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করার জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এতে সুযোগ থাকলেও অনেকেই পুরোটা বিনিয়োগ করেনি।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ নীতিমালা আংশিক শিথিল করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে প্রতিটি ব্যাংক প্রচলিত নীতিমালার বাইরে গিয়ে শেয়ারবাজারে আরও অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করার সুযোগ লাভ করে। এই অতিরিক্ত বিনিয়োগ আগামী ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রচলিত নীতিমালার আওতায় আসবে না।
কিন্তু গত দুই বছরেও এই নীতিমালা মেনে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেনি। অনেকেই তহবিলও গঠন করেনি। কারণ বিষয়টি ঐচ্ছিক। ব্যাংক মনে করলে তহবিল গঠন করা যাবে। আবার বোর্ড গঠন করলেও সেই বোর্ডে ফান্ড গঠনের বিষয়টি পাস হয়নি। আবার পাস হলেও ফান্ডে টাকা দেয়া হয়নি। আবার ফান্ডের টাকা দেয়া হলেও সে টাকা ব্রোকারেজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে না। সে কারণে সার্বিক বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। ফান্ডকে গতিশীল করার জন্যই এ মিটিং ডাকা হয়েছে।
বৈঠকের বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, সভায় তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায়, সবাই একমত হয়েছেন। এগুলো হলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমা ২৫ শতাংশের নিচে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে, তারা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দুই শতাংশ করে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যারা ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেননি, তারা দ্রুত গঠন করবেন। এছাড়া টায়ার-১ ক্যাপিটাল ও টায়ার-২
ক্যাপিটাল হিসেবে যেসব ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড ও সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যুর জন্য কমিশনে আবেদন করবে, সেগুলোর প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ২০০ কোটি টাকার মধ্যে ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিও উন্নয়নে ৪০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পোর্টফোলিওর উন্নয়নের ২০ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করা যাবে। অন্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার জন্য ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে। অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকার হাউসের উন্নয়নে ১০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পোর্টফোলিও বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ সাত শতাংশ সুদে বিনিয়োগ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের করপোরেট গ্যারান্টিতে এই ঋণ দেয়া যাবে।
এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নিজ ব্যাংকের শেয়ার কিনতে পারবে না। অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুই শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারবে না। অন্য কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে তাদের মোট শেয়ারের ১০ শতাংশের বেশি কেনা যাবে না। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে মেয়াদি ১০ শতাংশ ও মেয়াদবিহীন ফান্ডে ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে।
যেসব কোম্পানি গত ৩ বছরে ১০ শতাংশ করে বোনাস বা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে, কেবল ওইসব কোম্পানির শেয়ার কেনা যাবে। যেসব মিউচুয়াল ফান্ড বিগত তিন বছর ধরে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে, ওইসব শেয়ার কেনা যাবে।