প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
এবারের বাজেটে আবারও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার মতো ব্যাংকগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। হাতেগোনা কিছু লোক জনগণের টাকা ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট করে নেয় বলে ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়ে। আর সেখানে আবারও মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। অথচ পুঁজিবাজারে মানুষ প্রতিনিয়ত টাকা হারাচ্ছে। এমনকি ২০১০-১১ সালের বাজার ধসে অনেকেই আত্মহত্যাও করেছে। তা সত্ত্বেও সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না পুঁজিবাজারকে। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির জন্য জনগণের করের টাকা দেওয়াটা অর্থনীতির স্বাভাবিক নীতির পরিপন্থি। গতকাল এনটিভির মার্কেটওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা, সম্পাদনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজারবিশ্লেষক শাহাদাৎ হোসেন, এফসিএ এবং পুঁজিবাজারবিশ্লেষক আবু সাঈদ আহমেদ, এফসিএ।
শাহাদাৎ হোসেন বলেন, এবারের বাজেটে আবারও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার মতো ব্যাংকগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। হাতেগোনা কিছু লোক জনগণের টাকা ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট করে নেয় বলে ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়ে। আর সেখানে আমরা আবারও মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ রাখছি। অথচ পুঁজিবাজারে মানুষ প্রতিনিয়ত টাকা হারাচ্ছে। এমনকি ২০১০-১১ সালের বাজার ধসে অনেকে আত্মহত্যাও করেছে। তা সত্ত্বেও আমরা সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি না পুঁজিবাজারকে। তাছাড়া ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির জন্য জনগণের করের টাকা দেওয়াটা আসলেই অর্থনীতির স্বাভাবিক নীতির পরিপন্থি কাজ বলে মনে করি। দেশে হয়তো প্রত্যক্ষ কর সব শ্রেণির মানুষ দেয় না। উচ্চবিত্তরাই সাধারণত কর দিয়ে থাকে। কিন্তু করের একটি বড় অংশ প্রায় এক লাখ কোটি টাকার মতো সংগ্রহ করা হয় ভ্যাটের মাধ্যমে, যার চাপ প্রত্যেক শ্রেণির মানুষের ওপরে গিয়ে পড়ে। যেমন একটি ছোট বুক বাইন্ডিং প্রতিষ্ঠানের কাছে যদি কেউ বই বাঁধাই করতে যায়, তাহলে তাকে ভ্যাট দিতে হয়। এমনভাবে এই ছোট দরিদ্র শ্রেণির লোকের কাছ থেকে ভ্যাটের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে দেওয়া হচ্ছে ঋণখেলাপিদের। কারণ এদের কারণে ব্যাংকে যে মূলধনের ঘাটতি হচ্ছে সেই ঘাটতি পূরণের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই সমর্থন করার মতো নয়। তাছাড়া বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমানো দরকার। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোর করপোরেট ট্যাক্সের পার্থক্য ১৫ শতাংশ করলে ভালো হয়, যা এখন ১০ শতাংশ আছে। এই কাজটি করা হলে ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে আগ্রহী হবে বলে মনে করি। আর আমাদের বাজারে ভালো শেয়ারে ব্যাপক অভাব রয়েছে। ভালো শেয়ারের অভাবে বাজার সম্প্রসারিত হতে পারছে না। দেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ পুঁজিবাজারে জড়িত আছে। পৃথিবীর অনেক দেশ পুঁজিবাজারকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে জাতীয় রাজস্ব আয়ের বড় অংশ সংগ্রহ করে। তাই পুঁজিবাজারকে টিকিয়ে রাখতেই হবে এবং এটির উন্নতি করতে হবে। এটি করতে হলে পুঁজিবাজারকে বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে হবে। আর প্রণোদনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে করপোরেট ট্যাক্স।
আবু সাঈদ আহমেদ বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন ঘটছে। ছয়-সাত মাস আগে থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি মানি মার্কেটে সংকট শুরু হয়েছে। আর মানি মার্কেটের সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেট বেশ ভালোভাবে জড়িত। ফলে মানি মার্কেটে সংকট চললে তার এটি নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ে এবং বাজারে চাহিদার পতন ঘটে। এ কারণেই পুঁজিবাজারের বর্তমান এই অবস্থা। তাই বাজারের সমস্যা দূরীকরণে দেশের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর উৎপাদন বাড়লে চাহিদা বাড়বে। এতে পুঁজিবাজারের ছন্দ কিছুটা ফিরে আসবে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম