ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে পিছিয়ে নারী

শেখ আবু তালেব: শিক্ষাজীবন শেষে অভিজাত ও নিরাপদ হিসেবে নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় ব্যাংকিং পেশা। এজন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রবেশকালীন ও মধ্যম পর্যায়ে নারীদের উপস্থিতি বেশ। কিন্তু এর পরই ওপরের ধাপগুলো থেকে ক্রমাগতভাবে ছিটকে পড়ছেন নারীরা। ফলে বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ উচ্চপর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় অনেক কম।

যদিও নারী কর্মীদের সংখ্যা ব্যাংক খাতের চেয়ে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) সামান্য বেশি। দেশের ব্যাংক খাতে নারী কর্মীদের অবস্থান নিয়ে এরকম তথ্য পাওয়া গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে মোট জনবল রয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪ জন। এর মধ্যে নারী কর্মীদের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫১৩ জন। এটি ব্যাংক খাতের মোট জনবলের ১৫ দশমিক আট শতাংশ।

জানা গেছে, ব্যাংকে কর্মরত কর্মীদের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিন্ম বা প্রবেশকালীন পদবিন্যাস বা ধরনকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপককে সর্বোচ্চ পর্যায় ধরে উচ্চপর্যায় হিসেবে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দেশের ব্যাংক খাতে এসব পদে কর্মরতদের মধ্যে মাত্র আট দশমিক ৯৩ শতাংশ হচ্ছে নারী। অথচ ব্যাংকের মোট কর্মীর মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশই নারী। এরপর থাকা মধ্যম পর্যায়ে রয়েছেন ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ নারী এবং প্রারম্ভিক বা প্রবেশকালীন ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশই নারী।

প্রবেশকালীন ও মোট জনবলের মধ্যে শতাংশের পার্থক্যের কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আগে ব্যাংকে নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ সেভাবে ছিল না। বেসরকারি খাতে ব্যাংকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নারীবান্ধব বেশকিছু সুবিধা চালু করায় তাদের সংখ্যা বেড়েছে। এজন্য প্রবেশকালীন ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যাংকে নতুন চাকরির ক্ষেত্রে প্রায় ১৭ শতাংশই নারীরা নির্বাচিত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আর্থিক কর্মকাণ্ডে নারীর অবদান রয়েছে। ব্যাংক সেবা সবার কাছে নিতে হলে নারীদের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। এজন্য সরকারও নারীবান্ধব নীতিমালার প্রতি উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, সন্ধ্যার পরে ব্যাংকে না থাকার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তিসহ যাতায়াত সুবিধা দিতে নিয়মিত নীতিমালা করেছে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করেছে। ফলে দিন দিন ব্যাংকিং পেশার প্রতি নারীদের আগ্রহ বাড়ছে।’

দেশে কার্যরত অন্য ৬০টি তফশিলি ব্যাংক এবং ৩৪ এনবিএফআইর তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোয় পুরুষ কর্মীর সংখ্যা এক লাখ ৫৭ হাজার ২৭১ জন। এ হিসেবে নারীর অনুপাত হচ্ছে প্রায় ১৬ শতাংশ। কিন্তু ২০২০ সাল শেষে অনুপাত ছিল ১৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। ব্যাংকে পুরুষদের তুলনায় নারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা কমে আসায় এ অনুপাত কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোয় ৩০ বছরের কম বয়সী যেসব কর্মী রয়েছেন, তাদের মধ্যে ২২ দশমিক ১১ শতাংশ নারী। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী কর্মীদের মধ্যে নারীর হার ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এ হার ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর পেশাগত কারণে স্থানান্তরের হার ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ, ২০২০ সালে যা ছিল ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ব্যাংক খাতের মোট পরিচালকদের ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ নারী। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী পরিচালক রয়েছেন বিদেশি মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়। আবার কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে নারীর অনুপাত বিদেশি ব্যাংকগুলোতেই বেশি। এর পরই রয়েছে বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত খাত।

এদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা চালু করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো মাঝেমধ্যে লৈঙ্গিক সমতা-বিষয়ক সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। ব্যাংকগুলোর নেয়া এসব উদ্যোগের ফলে নারীরা স্বচ্ছন্দে চাকরি করতে পারছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও সময়ে সময়ে এসব সুবিধার বিষয়ে তদারকি করে থাকে। এজন্য নারীদের মধ্যে বাড়ছে ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের জনপ্রিয়তা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০