মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বেশ কিছুদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দর। সঙ্গত কারণেই বিনিয়োগকারীরাও ঝুঁকেছেন এ খাতের শেয়ার কেনাবেচায়। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন একটা উল্টো বাতাস বইতে শুরু করেছে। বিশেষত অতি সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, এবি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের শেয়ারের দর পতন হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এ ধরনের বড় বড় ব্যাংকের শেয়ারদরে পতনের প্রভাব অন্যান্য ব্যাংকের শেয়ারেও পড়তে পারেÑ এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে। এ অবস্থায় ব্যাংকের শেয়ার ধরে রাখবেন, নাকি ছেড়ে দেবেন এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন তারা। অন্যদিকে কয়েকটি ব্যংাকের শেয়ারদরে পতনকে ‘দর সংশোধন’ বলে আখ্যায়িত করছেন কেউ কেউ। তাদের মতে, এতে সার্বিক ব্যাংকিং খাতের শেয়ারে তেমন প্রভাব পড়বে না।
ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রম দিয়ে পুরোবাজার বা সেক্টরকে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাংকিং খাত ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ইতোমধ্যে এখান থেকে বিনিয়োগকারীরা প্রফিটও করেছেন। এখন হয়তো কোনো কারণে দর একটু কমে গেছে। আর পুঁজিবাজারের কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়বে আবার কমে যাবে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। এটা নিয়ে দুর্ভাবনার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।’
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা বেশি লোভী। সে কারণে মাঝে মধ্যেই তাদের ভুলের খেসারত দিতে হয়।’
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার জের ধরে মাত্র পাঁচ কার্যদিবসের ব্যবধানে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর কমে গেছে ৮ টাকা ৩০ পয়সা। ফলে যাদের এতদিন ইসলামী ব্যাংকের প্রতি আস্থা ছিল তাদের আস্থায়ও চিড় ধরেছে।
ব্যাংকটির বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা এ অভিযোগ তোলেন যে, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। লাভে থেকেও প্রতিষ্ঠানটি ক্যাটাগরি টিকিয়ে রাখার জন্য মাত্র ১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করবে এটা তারা কল্পনাও করতে পারেননি।
এদিকে এ ব্যাংকের দরপতনের সঙ্গে সঙ্গে কমে গেছে বেশকিছু দিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকা সিটি ব্যাংকের শেয়ারের দর। ৪১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার নেমে এসেছে ৩৫ টাকা ৪০ পয়সায়।
একইভাবে এবি ব্যাংকের শেয়ারের দর পাঁচ কার্যদিবসের ব্যবধানে ২৭ টাকা থেকে ২৪ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে এসেছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত অন্যান্য ব্যাংকের শেয়ারের দরও কমে গেছে। যা ভাবিয়ে তুলেছে বিনিয়োগকারীদের।
এ বিষয়ে কথা হয় সাজেদুল করিম নামে এক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আর্থিক অবস্থা ভালো ও সেইসঙ্গে ব্যাংক শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত দেখে অন্য খাতের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ করেছিলাম। যার সিংহভাগই ছিল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার। ব্যাংকের মধ্যে এ ব্যাংকটিকে আর্থিক বিবেচনায় ওপরের দিকে রাখা হয়। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান যেহেতু আমাদের হতাশ করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে লোকসান হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা। ফলে অন্য ব্যাংকে আর ভরসা পাচ্ছি না।’
Add Comment