শেখ আবু তালেব: খেলাপি হওয়া ঋণ থেকে অর্থ আদায় একপর্যায়ে প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আবার কিছু ঋণ থেকে অর্থ ফেরত আসে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়েও কম। কিন্তু ব্যাংকের হিসাবে মূলধনের সঙ্গে ফেরত আসার কথা সুদের। সম্ভাব্য সুদ না আসায় তা জমা হয় স্থগিত সুদ হিসাবে। গত সেপ্টেম্বর শেষে এ হিসাবে জমা হওয়া অনাদায়ী সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এমন তথ্য। এর মধ্যে অনাদায়ী সুদ হিসাবে সর্বোচ্চ পরিমাণে অর্থ জমা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির অনাদায়ী সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ছয় হাজার ২৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে যা ছিল পাঁচ হাজার ২৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বৃদ্ধি পায় এক হাজার ২৩০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে অনাদায়ী সুদের প্রবৃদ্ধি হয় ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অপর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এ ব্যাংকে জমা হওয়া সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২৮২ কোটি টাকা, এক বছর আগে যা ছিল তিন হাজার ৭৫০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এ ব্যাংকেও বৃদ্ধি পায় ৫৩১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এ খাতে সুদ জমা হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে করোনা মহামারি। এই সময়ে অনেকেই ব্যাংকঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। কিন্তু ব্যাংকগুলোকে প্রতি তিন মাস অন্তর সুদের এ হিসাবটি জমা দিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। করোনাকালে মানুষের সুবিধার্থে সকল প্রকার ঋণের বিপরীতে কিস্তি জমা দানের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত সুবিধাটি অব্যাহত থাকবে। এই সময়ের মধ্যে ব্যাংক কোনো গ্রাহককে ঋণের অর্থ ফেরত চাইতে বাধ্য করতে পারবে না। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সামর্থ্যবানরাও ব্যাংকঋণ পরিশোধে অনীহা দেখাচ্ছেন।
তথ্য অনুযায়ী, অনাদায়ী সুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয়। তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে অনাদায়ী সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৭৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকের ৩১৪ কোটি টাকা, বিশেষায়িত ব্যাংকের এক হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২২২ কোটি ৪৬ লাখ এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এক হাজার ১০৪ কোটি টাকা।
ব্যাংক খাতে অনাদায়ী সুদের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়ে বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটি ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত অর্থের ধার্যকৃত সুদ। ধার্যকৃত সুদের যে অংশটুকু আদায় হয় না, তা অনাদায়ী সুদ হিসাবে দেখাতে হয়। ঋণখেলাপিদের কাছেই এ অর্থ পাওনা রয়েছে। এটি আদায় হলেই আয় খাতে দেখানো হবে। কিন্তু করোনাকালে অনেক ব্যবসায়ী অর্থ পরিশোধ করছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার মাধ্যমে সুযোগটি দেয়ায় সামর্থ্য থাকার পরও অনেকে দিচ্ছেন না।’
যদিও অনাদায়ী সুদের প্রকৃত পরিমাণ আগামী বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষ হলে জানা যাবে বলে মনে করেন এই ব্যাংকার।
তথ্যমতে, অনাদায়ী সুদ হচ্ছে ব্যাংকের সম্ভ্যাব্য সুদ আয়। অনেক ব্যাংকই এটিকে আয় দেখিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাংক ও শেয়ারহোল্ডাররা। এটি বন্ধ করতে সুদ আদায় না হলে তা আয় বা মুনাফা খাতে না দেখাতে নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সুদ আদায় না হলে তা আয় খাতে স্থানান্তর করতে পারে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।