ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের সমস্যা দীর্ঘদিনের। আসলে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আসেন, আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আসেন। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পর্ষদ যা বলে বাধ্য হয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা তাই করেন। পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ভালো করে যাচাই-বাছাই করতে পারেন না কাদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় কাজের স্বাধীনতা অনেকটা খর্ব হয়েছে। এর ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে প্রতিনিয়ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর স ালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপার্সন এমএস সেকিল চৌধুরী ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। স্কাইপের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবীর।
এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সিপিডি ও এবিবি এবং বিভিন্ন সংস্থা ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দুর্বলতার তথ্য তুলে ধরেছে। রাজনৈতিক বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক না কেন এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এখন কথা হচ্ছে, এই তথ্যগুলো সঠিক কি না, তা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি তথ্যগুলো সঠিক হয়, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ গুটিকয়েক ব্যক্তির স্বার্থের কারণে দেশের হাজার হাজার লোকের কষ্টে জমানো টাকা এভাবে লুটপাট হতে পারে না। আসলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে কোনো সমস্যা সমাধানে পর্যাপ্ত যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু তাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আসলে দেশে সুশাসনের খুব অভাব রয়েছে। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, এখানে কেউ সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে চাইলেও তা পারেন না, কারণ কিছু বাধাবিপত্তি রয়েছে।
আহমদ আল কবীর বলেন, ব্যাংক খাতে প্রতিনিয়ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এটি আসলে একটি ক্রনিক সমস্যা। অতি শিগগিরই এর সমাধান করা প্রয়োজন এবং কোনোমতেই এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে গড়িমসি করার সুযোগ নেই।
মিজানুর রহমান বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের যে সমস্যা, এটি আসলে সঠিকভাবে বুঝতে হবেÑকী কারণে বা কেন প্রতিষ্ঠানগুলো খেলাপি হচ্ছে। আসলে ব্যাংকগুলো খেলাপি হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বোর্ড ও ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা পরিচালনায় আসেন আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আসেন। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের বোর্ড ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পর্ষদ যা বলে বাধ্য হয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা তাই করেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় কাজের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে। বোর্ডের নির্দেশ অনুযায়ী, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ফলে ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ভালো করে যাচাই-বাছাই করতে পারেন না। এর ফলেই রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে প্রতিনিয়ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি। এটি দীর্ঘকাল থেকে হয়ে আসছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বারবার সতর্ক করলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে যখন বেসিক ব্যাংকের সমস্যা দেখা দিয়েছিল তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমস্যা সমাধানে হস্তক্ষেপ করেছিল, কিন্তু তাতে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। আবার সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকই প্রথম চিহ্নিত করেছে, কিন্তু সেখানেও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। অর্থাৎ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিনদিন ঘনীভূত হচ্ছে। এর পেছনে মূল কারণ সুশাসনের অভাব এবং এর সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির কিছু কারণ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক এবং অর্থনীতির গ্রোথও চার দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে সাত দশমিক আট শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আগামীতে আট শতাংশে উন্নতি করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু ব্যাংক, আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারের ব্যবস্থাপনায় তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এই সব নিয়ন্ত্রক সংস্থায় যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করেন তাহলে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজার আরও সমস্যায় পড়বে এবং আগামীতে অর্থনীতির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে পৌঁছাতে পারবে না। কারণ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজার একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ