ব্যাংক ও আর্থিক খাতের মূল সমস্যা ব্যবস্থাপনায়

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে  শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

অনেকেই মনে করেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে তারল্যে সংকট চলছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ব্যাংকগুলোতে কোনো তারল্যে সংকট নেই। সরকারি ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য বা অনেক ফান্ড এখনও অব্যবহƒত পড়ে আছে। ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে ব্যবস্থাপনার। এখানে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তদারকি করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি ড. জামাল উদ্দিন এবং অর্থনীতিবিদ ড. আহমদ আল কবীর।

জামাল উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণখেলাপিরাই তো বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান। দেশে অর্থ ঋণ আদালতে পৃথক ট্রাইব্যুনাল থাকা উচিত এবং সেটিকে কার্যকারি করতে হবে। অন্যদিকে ব্যাংকের পরিচালক সংক্রান্ত যে আইন পরিবর্তন করা হয়েছে সেটি ঠিক হয়নি। পরিবর্তিত আইন অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকের পরিচালক একই পরিবারের দুজনের জায়গায় চারজন এবং ছয় বছরের জায়গায় ৯ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এটির কারণে ব্যাংক খাতে অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হবে এবং ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে তারা হবে অনেক ক্ষমতাধর। ফলে ব্যাংক খাতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই এ নিয়মটিকে পরিবর্তন করা উচিত।

আহমদ আল কবীর বলেন, ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি অবশ্যই নির্ভর করে ব্যবস্থাপনার ওপর। অনেকেই মনে করেন বর্তমানে ব্যাংক খাতে তারল্যের সংকট চলছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকগুলোতে কোনো তারল্যের সংকট নেই। সরকারি ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য বা অনেক ফান্ড এখনও অব্যবহƒত পড়ে আছে। ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে ব্যবস্থাপনার। এখানে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তদারকি করতে হবে। যেমন সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা এ চারটি সরকারি ব্যাংক অনেক বছর ধরে চলছে। কিন্তু কেউই তাদের নিজস্ব মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়নি। একমাত্র আমিই ২০০৯ সালে ১২৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন করার উদ্যোগ নেই এবং ১৯৮৬ সাল থেকে এটি চলছিল ১২৫ কোটি টাকায়। পরবর্তীতে আমরা সেটিকে বছরে বছরে বাড়ানোর চিন্তা করলাম এবং আমি সবশেষ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মতো রেখে আসি। কাজেই সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা এরা সবাই প্রতি বছর মুনাফা করছে। এ জায়গায় যদি একটু সচেতন চেষ্টা থাকতো তাহলে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো চেষ্টা সফল হতো।  কিন্তু এ ধরনের কোনো উদ্যোগ তাদের ছিল না। কাজেই এখানে ব্যবস্থাপনা একটি বড় বিষয়। ফলে এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিস্ট ব্যাংক মিলে একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত। এখানে শুধু নন পারফরমিং লোন (এনপিএল) কমালে চলবে না। এনপিএল একটি প্রধান ইস্যু এবং এটি একদিনের নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি ইস্যু। এ ইস্যুটি এখন সামনে এসেছে। বর্তমানে অটোমেশন থাকায় কেউ কিছু লুকাতে পারছে না। আগে এগুলোকে বিভিন্নভাবে গোপন করে দেখানো হয়েছে। সুতরাং আমাদের অ্যাসেট কোয়ালিটির উন্নতির জন্য অবশ্যই কাজ করতে হবে। আর এ কাজটি করার জন্য বোর্ডকে একটি লক্ষ্যমাত্রা দিতে হবে আর ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা কাজটি করতে পারবে না তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

 

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০