ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা বোর্ডে থাকে, তাদের যোগসাজশে ব্যাপক ঋণ দেওয়া হয়েছে। পরে এসব ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়। পুঁজিবাজারে বাজার মূলধনের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাত। এ দুটি খাতে কেন্ত্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতীতে এ খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও গত দুই বছরে অজ্ঞাত কারণে সে সক্ষমতা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিজানুর রহমান এবং দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারের অবস্থা বেদনা ও হতাশার। গত এক বছর বা ১৮ মাসে বাজারের অবস্থা যদি পর্যালোচনা করি সেক্ষেত্রে দেখা যাবে, দৈনিক টার্নওভার ৩০০ কোটিতে নেমে এসেছে। এছাড়া সূচক, মৌল ভিত্তি, স্বল্প মূলধনিসহ মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারের দর ব্যাপকহারে কমেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনটি কারণে বাজারে এ অবস্থা বিরাজ করছে। প্রথমত, তারল্য সংকট; অর্থাৎ সরকারের খরচ যে হারে বেড়েছে, সে হারে আয় বাড়েনি। ফলে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গত তিন বছরে বেসরকারি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ হয়েছে, কিন্তু সে বিনিয়োগের মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। দ্বিতীয়ত, গত কয়েক বছরে আইপিও’র মাধ্যমে যে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হয়েছে, তার প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে করা হয়নি। কারণ এসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার আগে ব্যাপক উৎপাদন, ভালো ইপিএসসহ আরও অনেক বিষয় ইতিবাচক দেখানো হয়েছে। কিন্তু তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সেগুলো হ্রাস পেয়েছে। তাদের সততা ও স্বচ্ছতা ভালোভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। তৃতীয়ত, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যারা বোর্ডে থাকেন, তাদের যোগসাজশে ব্যাপক ঋণ দেওয়া হয়েছে। পরে এসব ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। পুঁজিবাজারে মূলধনের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাত। এ দুটি খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতীতে এ খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হলেও গত দুই বছরে অজ্ঞাত কারণে সে সক্ষমতা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
জাকির হোসেন বলেন, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ শিক্ষার কথা বারবার বলা হচ্ছে। একজন বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অর্থাৎ দেখে-শুনে, বুঝে এবং ভালো করে বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করতে হবে। এখন কথা হচ্ছে, যারা বাজারের মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের যোগাযোগ রয়েছে। অর্থাৎ যাদের ট্রেড অফিশিয়াল বা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেচাকেনার সঙ্গে সর্ম্পক রয়েছে, তারা বিনিয়োগ শিক্ষার মাধ্যমে কতটুকু তাদের গ্রাহককে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে, এখানে তা দেখার বিষয় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাঝে মাঝে দেখা যায় বাজারসংক্রান্ত বিষয়ে সভা হচ্ছে। এখন বাজারে আর তারল্য সংকট থাকবে না। সব সমস্যা সরকার দেখবে। বাজার ভালো করার জন্য অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আসলে এ ছোট ছোট বিষয় দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে না এবং বাজার দীর্ঘমেয়াদিভাবে ভালো করা যাবে না। আবার বিশ্বের সব পুঁজিবাজারে কারসাজি হয়ে থাকে। তবে আমাদের পুঁজিবাজারে এর প্রবণতা বেশি। এটি বন্ধ করতে হবে। যদি বন্ধ করা না যায়, তাহলে বাজারে কারসাজি হতে থাকবে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং বাজার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ