ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ বনাম গ্রাহকস্বার্থ

এসএম নাজের হোসাইন: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-কেলেঙ্কারি বেশ আলোচিত ও সমালোচিত একটি ইস্যু, যার পরিণামে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সফল গভর্নরকে অকালে বিদায় নিতে হয়েছে এবং দীর্ঘসময় ধরে আলোচিত বিষয় ছিল অর্থমন্ত্রীর বিদায়। ব্যাংকের সুদের হার এক ডিজিটে নিয়ে আসা নিয়ে সাম্প্রতিককালে জোরালো আলোচনা হলেও খোদ প্রধানমন্ত্রী কয়েকবার বলার পরও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুদের হার এক ডিজিটে নামিয়ে আনতে পারেনি। পরে অবশ্য সরকারের কতিপয় মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে প্রথমে সরকারি ব্যাংক ও পরে বেসরকারি ব্যাংকগুলো সুদের হার নামিয়ে আনার ঘোষণা দিলেও ব্যাংকের গ্রাহকদের বক্তব্য হলো এখানে এখনও অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুদের হার এক ডিজিটে নামাতে নানা গড়িমসি করছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা সুদের হার কমাতে গড়িমসি করলে সরকার তাদের বিশাল আকারের সুবিধা প্রদান করে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে হোটেলে ডেকে নিয়ে মিটিংয়ে বসার দুঃসাহস পর্যন্ত তারা দেখিয়েছেন। তবে অনেকেই বলে থাকেন বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ। ব্যবসায়ীরা সব সময় তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে আসছেন আমরা গোড়া থেকে এটা দেখে আসছি। এ নিয়ে বেশি কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না সে যে ধরনের ব্যবসায়ীই হোক না কেন? তারা ব্যাংকের ব্যবসায়ী, গাড়ির ব্যবসায়ী, চাল-ডালের ব্যবসায়ী, ওষুধ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জমিজমা বিক্রি, পত্রিকা-মিডিয়া, মোবাইল ফোন, ক্লিনিক-ডায়াগস্টিকের মালিক যাই হোক না কেন, সরকারের নীতিনির্ধারকদের বশীকরণে তাদের হাতে থাকে জাদুর বাক্স। ফলে যাবতীয় নীতি প্রণীত হবে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে, জনগণ বা ভোক্তার স্বার্থে নয়। এ অবস্থার পরিত্রাণ কবে হবে, সেটা মহান সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র ভালোভাবে জানেন। তবে ব্যাংকের সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে যারা প্রধান ভুক্তভোগী তাদের সিংহভাগই ব্যবসায়ী, সে কারণে বিষয়টিতে ত্বরিত গতিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। কিন্তু অপরাপর বিষয় সেভাবে আলোচনায় স্থান পাচ্ছে না।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি বেশ আলোচনায় ঝড় তুলেছে, তা হলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে করতে একজন গ্রাহকের শার্ট-প্যান্ট থেকে শুরু করে সব দিয়েও সবশেষে আন্ডারওয়্যারটি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বিষয়টি অনেকে কাল্পনিক মনে করলেও এটি সত্যিকারের কাহিনি। যারাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ নিয়েছেন, তাদের অধিকাংশের বেলায় এ দৃশ্যটি প্রমাণিত হয়েছে বারবার। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের অনেক নীতিনির্ধারকরা এনজিওদের সুদখোর নামে আখ্যায়িত করলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্তচোষা বলতে কিছুটা দ্বিধান্বিত। এর পেছনে হয়তো কিছু অন্তর্নিহিত কারণ থাকতে পারে। যেমন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো পত্রিকা বা মিডিয়ার খবর প্রকাশে অনীহা থাকার মূল কারণ বর্তমানে টিভি ও পত্রিকার বিজ্ঞাপনের বড় অংশ জোগান দিচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার অনেক পত্রিকার মালিকেরও এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শেয়ার থাকে।
আমার আলোচনার বিষয় হলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও গ্রাহকস্বার্থ। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একসময় সুদখোর বলা হতো জোরেশোরে। কারণ তারা স্বর্ণ বন্ধক রেখে চড়া সুদে ঋণ প্রদান করে থাকে। অপ্রাতিষ্ঠানক খাতে এখনও স্বর্ণব্যবসায়ীরা এ খাতে বড় জোগানদার। ঠিক একইভাবে একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যখন কাউকে ঋণ দেয়, তখন যাবতীয় সহায়-সম্বলগুলো ঋণের বিপরীতে জামানত/বন্ধক রেখে ঋণ দেয়। সহায়-সম্বল বন্ধক নিয়ে নেওয়ার পরও তারা আবার খোলা চেকও জামানত নিচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে আপত্তি দিয়েছে, কিন্তু কে শুনে কার কথা? বাংলাদেশ কর্তারা হিমঘরে বসে নির্দেশনা দিলেও ব্যাংকগুলো কর্ণপাত করে না। আর ঋণের সুদ যা-ই হোক না কেন, ঋণ আদায় প্রক্রিয়াটি ভয়াবহ, যা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। যেমন আপনি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ নিলেন ১৫ বছরের জন্য। সেক্ষেত্রে আপনার মাসিক কিস্তি হবে ২৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর ১৫ বছরের প্রথম ১০ বছর আপনার ঋণের কোনো আসল পরিশোধ হবে না। ১০ বছর পর আপনার আসল পরিশোধ হওয়া শুরু হবে। আমাদের দেশে বড় মাপের অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, কিন্তু সেই আদিম যুগের মহাজনি প্রথার মতো সুদ কষার হিসাব এখনও বাংলাদেশ থেকে যায়নি। আর সাধারণ গ্রাহকের পক্ষে কথা বলা লোকের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। সাবেক সফল গর্ভনর ড. আতিউর রহমান কিছু সংস্কার শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত অকালে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
ব্যাংকের প্রচলিত ঋণের সুদ নির্ধারণ ও কিস্তি আদায়ের প্রক্রিয়াটির বিষয়ে অনেকে বলবেন, এটি বিশ্বজুড়ে সুদ নির্ধারণ প্রক্রিয়াÑসে কারণে বাংলাদেশে এটা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সেখানে আমি বলতে চাই, দরিদ্র মানুষকে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার পর তা সফলভাবে আদায় করে বাংলাদেশ দেখিয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফল দারিদ্র্য বিমোচনের মডেল। সে কারণে প্রচলিত ব্যাংক ঋণের সুদ নির্ধারণ ও আদয় প্রক্রিয়াটিও পরিবর্তন বাংলাদেশ থেকে শুরু হতে পারে। এখানে প্রচলিত ব্যাংকের ঋণের দুটি গল্প উপস্থাপন করতে চাই। দেশে সুনামধারী একজন ব্যাংকের গ্রাহক যিনি মফস্বল শহরের একটি শপিং মলে জুতার দোকানের মালিক, ব্যবসার প্রয়োজনে ঋণ নিলেন মাত্র ১৫ লাখ টাকা। ব্যাংক ব্যবস্থাপক প্রথমে ওডি হিসাবে ঋণ দিলেন, পরে তা পরিবর্তন করে এসএমই ঋণে পরিবর্তন করে দেন। ওই গ্রাহক তিন বছর প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করার পর ওই গ্রাহক যখন পুরো ঋণটি শেষ করতে চাইলেন তখন ব্যাংক আরও ১৫ লাখ টাকা দাবি করল? একপর্যায়ে বিষয়টি ফয়সালা করতে না পেরে ক্যাবের কার্যালয়ে অভিযোগ জানাল। ক্যাব বিষয়টি নিয়ে প্রথমে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির মধ্যস্থতায় মীমংসা করার উদ্যোগ নেয়। ইত্যবসরে স্থানীয় ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক ওই গ্রাহকের নামে পাঁচটি মামলা ঠুকে দেন। ঋণ নেওয়ার সময় জামানত হিসাবে তার জমি বন্ধক রাখা হয় এবং তারিখবিহীন খোলা চেক জমানত নেওয়া হয়, যা দিয়ে আদালতে চেকের মামলা রুজু করা হয়। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় আদালত কোনো ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ না করে আসামির বিরুদ্ধে পাওনা টাকা আদায়ে সমন ও গ্রেফতারি নোটিস ইস্যু করেন। এক পর্যায়ে ক্যাব এবং ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে মাত্র আট লাখ টাকায় বিষয়টি মীমাংসা হয়। গ্রাহক তার বন্ধক রাখা জমি ও খোলা চেকগুলো ফেরত পান এবং ঋণ থেকে মুক্তি পান।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকরিজীবী ২০১০ সালে এইচএসসিসি ব্যাংক থেকে ১৫ বছর মেয়াদি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট কিনলেন। চুক্তি ছিল ব্যাংক ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ হারে সুদ নেবে। সেই হিসাব অনুযায়ী মাসিক কিস্তি পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ৫০০ টাকার মতো। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সুদের হার বেড়ে গেল পর্যায়ক্রমে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত এবং মাসিক কিস্তি গিয়ে ঠেকল ৩৪ হাজার টাকায়। তার পরিকল্পনা ছিল পাঁচ বছর পরে এককালীন বাকি টাকা নগদ পরিশোধ করে ঋণমুক্ত হবেন। যথারীতি পাঁচ বছর পরে ব্যাংকে গিয়ে বকেয়ার হিসাব নিতে গিয়ে দেখেন ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা বকেয়া আছে। ভদ্রলোক অবাক, এটা কীভাবে হয়, কারণ তিনি এরই মধ্যে ২২ লাখ টাকা পরিশোধ করে ফেলেছেন। কারণ জিজ্ঞেস করায় ব্যাংক বলল, ১৫ বছরের ঋণের সুদ অগ্রিম হিসাব করে মাসিক কিস্তির সঙ্গে ৯৫ শতাংশ হারে কেটে নেওয়া হচ্ছে এবং গৃহঋণের এটাই নিয়ম। অর্থাৎ এই পাঁচ বছরে ঋণের আসল কাটা গেছে মাত্র পাঁচ শতাংশ হারে। এটা যেন মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। পরে তিনি নিজের বোকামি বুঝতে পেরে সিদ্ধান্ত নিলেন আর এই ফাঁদে পা দেবেন না, অন্যত্র অনেক মূল্যবান প্রপার্টি বিক্রি করে ব্যাংকের বকেয়া টাকা এককালীন পরিশোধ করলেন।
এখানে এখন প্রশ্ন হলো সুদখোর বলে যাদের আমরা প্রতিনিয়ত গালাগাল দিচ্ছি, সে এনজিওগুলো ঋণের কিস্তি আদায়কালে মূল টাকার সঙ্গে ঋণের সুদের সমন্বয় করলেও ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিগুলো আগে পুরো সুদ আদায় করে নিয়ে ৫-১০ বছর ঋণের কিস্তি দেওয়ার পর ক্রমান্বয়ে মূল টাকাগুলো সমন্বয় করে থাকে, যে কারণে কোনো ঋণী গ্রাহক ব্যাংকের ঋণের টাকা দিতে দিতে ফতুর হয়ে যান। আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক ও কর্মচারীরা দিনে দিনে এয়ারকন্ডিশন বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করে থাকেন। ব্যাংক মালিকরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যাংক খুলছেন, আর যারা এর জোগান দেন সেই ঋণী গ্রাহকরা দিনে দিনে ফতুর হয়ে যাচ্ছেন। এনজিওগুলো আরও একটি কাজ করে থাকে, তা হলো কোনো কারণে কোনো ঋণী গ্রাহক ব্যবসায় লোকসান দিলে তারা তাকে বর্ধিত ঋণ দিয়ে তার ব্যবসাটি আবার চালু করতে সহায়তা করে এবং ঋণী কোনো কারণে মারা গেলে তার ঋণটি বিমা থেকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ঋণ গ্রাহকের যাবতীয় ঋণ মওকুফ করে। ব্যাংকের বেলায় ঋণী গ্রাহক মারা গেলে তার পরিবার-পরিজনকে সে টাকা পরিশোধ করতে হয়।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিকার পাওয়ার জন্য আবেদন জানানোর রীতি আছে। সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমানের আমলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালের ১ এপ্রিল গ্রাহক স্বার্থসংরক্ষণ কেন্দ্র (সিআইপিসি) গঠন করে। পরিধি বাড়তে থাকায় পরে একে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস (এফআইসিএসডি) নামে পূর্ণাঙ্গ বিভাগে রূপ দেওয়া হলেও গর্ভনর পরিবর্তন হওয়ার পর এটি একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। কোনো গ্রাহক অভিযোগ করলে তার কোনো প্রাপ্তিস্বীকার পর্যন্ত করা হয় না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও গ্রাহক হয়রানি সম্পর্কে তারা কি কিছু করতে পেরেছে? যদিও এই এফআইসিএসডি প্রতি বছর তাদের কার্যক্রমের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে, তবে এ প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন আছে। কিন্তু কতজন গ্রাহক এখান থেকে প্রতিকার পেয়েছেন তার সত্যতা নিয়ে সন্দেহের মূল কারণ হলো ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্তার কোনো কথা শুনছে না, সেখানে এই এফআইসিএসডি সেকশনের কথা কতটুকু আমলে নেবেন? অন্যদিকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানে এনজিওদের নিয়ন্ত্রণে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পৃথক দপ্তর আছে। যেখানে কোনো এনজিওর গ্রাহক হয়রানি বা অনিয়মের অভিযোগ করলে ওই এনজিওর লাইসেন্স বাতিল করা হয়। সে কারণে এনজিওদের কার্যক্রমে একটি শৃঙ্খলা ও গ্রাহক হয়রানির প্রতিকার পাওয়া গেলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেলায় তার বিপরীত। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলির নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হলেও গ্রাহক হয়রানি ও অনিয়ম নিয়ে কোন কার্যকর উদ্যোগ নিতে আজ পর্যন্ত সক্ষম হয়নি। বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকেও কোনো কোনো সময় আমলে না নিয়ে সরকারের শীর্ষমহলের কাছে দেনদরবার করে থাকে। ফলে একজন সাধারণ গ্রাহকের আজাহারি ও কান্না তাদের কাছে যাচ্ছে না। ফলে ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম ও গ্রাহক হয়রানি এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে, যার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে। ব্যাংক লুটপাট, ঋণ প্রদানে অনিয়মসহ নানা রোগে ব্যাংকগুলো যেমন আক্রান্ত, তেমনই ঋণ প্রদানে উচ্চ সুদ, আবার গ্রাহকের টাকায় ব্যাংকের পকেট ভারী করা হলেও লাভের পরিমাণ খুবই নগণ্য। যারা ব্যাংকের মালিক তারা যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করেছেন, তার দশগুণ তুলে নিচ্ছেন নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে।
অনেক বিশেষজ্ঞ গ্রাহকপর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও মূলত এটি হবে গ্রাহকদের সঙ্গে আরও একটি প্রতারণার বিষয়। কারণ কোনো গ্রাহক অভিযোগ করে প্রতিকার পেলে, সে অন্য গ্রাহকদের বিষয়টি জানাবেন। কিন্তু গ্রাহক ব্যাংক ঋণ নেওয়ার সময় যেরকম পায়ের স্যান্ডেল ক্ষয় করে ঋণ পান, সেরকম একটি অভিযোগ দিয়ে পুরো বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের এফআইসিএসডি অফিসে জুতা ক্ষয় করেও প্রতিকার না পেলে অভিযোগ জানানো তো দূরের কথা, এর ধারেকাছেও যাবেন না। অভিযোগ নিষ্পত্তিতে এফআইসিএসডি’র চরম শৈথিল্য প্রদর্শন, অনাগ্রহ এবং অধিকাংশ স্থানে গ্রাহকদের অভিযোগে নিরুৎসাহিত করার ঘটনায় এই বিভাগটির প্রতি সাধারণ গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস হারানোর ফলে গ্রাহকরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। ভোগান্তির মাত্রা চরম হলেও গ্রাহকরা এখানে অভিযোগ করতে অনাগ্রহী। কারণ অভিযোগ জানানোর হেলপ লাইনটি সচল নয়। তাই গ্রাহকস্বার্থ রক্ষায় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবিলম্বে এফআইসিএসডি সেলটি পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করাসহ অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের আদলে গণশুনানির আয়োজন করা এবং বিভাগের কার্যক্রম নজরদারির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন ও ক্যাব প্রতিনিধি সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় মনিটরিং কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)
cabbd.nazer@gmail.com

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১