সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে যে সরকারই আসুক না কেন যদি পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাতের উন্নয়ন করতে হয়, সেক্ষেত্রে এই দুই খাতে দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বসাতে হবে। অর্থাৎ যারা পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাত বিষয়ে অভিজ্ঞ। পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাতে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে, সেগুলো কাটিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। কারণ পুঁজিবাজার ও ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যদি এরকম সমস্যা চলতে থাকে সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতি হুমকিতে পড়বে। তাই সরকারকে এই দুই খাতের প্রতি কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ছিলেন বিডি নিউজ টুয়েনটিফোর ডটকমের অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি এবং দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর মো. জাকির হোসেন।
আবদুর রহিম হারমাছি বলেন, সার্বিকভাবে বলতে গেলে ২০১৮ সালের অর্থনীতি মোটামুটি ভালো অবস্থানে ছিল। বিশেষ করে রফতানি আয়, বৈদেশিক আয় এবং রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে। অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক। তবে ব্যাংক খাত বেশ নাজুক অবস্থানে ছিল। চলতি বছরজুড়েই ব্যাংক খাতের সুশাসন ও বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম নিয়ে আলোচনা-সমলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে।
২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ডিমিচুয়ালাইজেশন, আধুনিকায়ন, চীনের বিনিয়োগ আসা প্রভৃতি কাজ হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। ফলে বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন পুঁজিবাজার স্থিতিশীল অবস্থানে যাবে। কিন্তু সেটির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায়নি, বরং অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম ফেস ভ্যালুর নিচে নেমে গেছে। আবার ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দেশের অর্থনীতিতে যেভাবে প্রবৃদ্ধির অগ্রগতি প্রতিফলিত হয়েছে, সেভাবে পুঁজিবাজারে ঘটেনি। এর কারণ হতে পারে সরকারের শীর্ষ মহলের পুঁজিবাজারের প্রতি নজর ছিল না, বা পুঁজিবাজার সম্পর্কে মুখে যেটা বলেছে সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এটাই মূল বিষয়। এখন কথা হচ্ছে অর্থনীতির অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে পুঁজিবাজারকে বাদ দিয়ে নয়, কারণ একটি দেশের পুঁজিবাজার সে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সার্বিকভাবে বলতে গেলে বর্তমানে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে নেই।
তিনি আরও বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে যে সরকারই আসুক যদি পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাতের উন্নয়ন করতে হয়, সেক্ষেত্রে এই দুই খাতে দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বসাতে হবে, অর্থাৎ যারা পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ। পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাতে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। সেগুলো কাটিয়ে উঠে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে, কারণ পুঁজিবাজার ও ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যদি এরকম সমস্যা চলতে থাকে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতি হুমকিকে পড়বে। তাই সরকারকে এই দুই খাতের প্রতি কঠোরভাবে নজরদারি রাখতে হবে।
মো. জাকির হোসেন বলেন, কয়েক দিন আগে সিঙ্গাপুরের এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটাল অর্থাৎ এএফসির তথ্যমতে, ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে ১৭ শতাংশ পতন হয়েছে। এই ১৭ শতাংশ কমে যাওয়ার জন্য চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনকে দায়ী করেছে সংস্থাটি। আবার ডিএসইর তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বাজার মূলধন প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এছাড়া দৈনিক গড় লেনদেন ও সূচকের পরিমাণ অনেক কমেছে। অর্থাৎ পুঁজিবাজারের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করলে ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক বলা যায় না। এখন কথা হচ্ছে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। পুঁজিবাজার-সম্পর্কিত যে সংস্থাগুলো রয়েছে, তারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তবে একসময় বাজার স্থিতিশীল অবস্থানে যাবে বলে মনে করি।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ