নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থানেও বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো শেয়ারদর হারাচ্ছে অস্বাভাবিকভাবে। কমছে ৯০ শতাংশেরও বেশি কোম্পানির শেয়ারদর। ব্যাংকে একই পরিবারের চারজনকে পরিচালক নিয়োগ ও একটানা ৯ বছর পরিচালক পদে থাকার বিধান যুক্ত করে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগে পরিচালক হওয়ার জন্য শেয়ার কিনছে উদ্যোক্তাদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। এর ফলে ব্যাংক খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ায় বস্ত্র খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ২০৪ পয়েন্টের বেশি বাড়লেও বস্ত্র খাতের ৯২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদরে পতন হয়েছে। গত আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে বস্ত্র খাতের ৪৮টি কোম্পানির মধ্যে ৪৪টির দর কমেছে। এর মধ্যে চারটি কোম্পানি আরএস স্পিনিং, জাহিন স্পিনিং, আরগন ডেনিম ও ইটিলের শেয়ারদর কমেছে লভ্যাংশ ঘোষণা ও লভ্যাংশ অ্যাডজাস্ট হওয়ার কারণে। এছাড়া তুংহাই নিটিংয়ের দর কমেছে ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলের দর কমেছে ১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ, হাওয়েল টেক্সটাইলের দর কমেছে ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, প্রাইম টেক্সটাইলের দর কমেছে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ, ড্রাগন সোয়েটারের দর কমেছে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ, আনলিমা ইয়ার্নের দর কমেছে ১১ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ এবং সিম টেক্সটাইলের দর কমেছে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ। অন্যদিকে আরএস স্পিনিং ও জাহিন স্পিনিং লভ্যাংশ অ্যাডজাস্ট হওয়ায় দর কমেছে যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ ও ২১ দশমিক ২৯ শতাংশ।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের সিংহভাগ বিনিয়োগকারী গুজবের পেছনে দৌড়ায়। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে প্রতিটি পরিবার থেকে চারজন করে পরিচালক থাকার প্রস্তাব করার পর থেকে ব্যাংক খাতে চলছে টানা উত্থান। ব্যাংক খাতের বিভিন্ন শিল্পগ্রুপের অংশগ্রহণের বিভিন্ন গুজবও এ খাতে উত্থানের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। আর বিদায়ী সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে ইন্স্যুরেন্স খাতের উত্থান। ব্যাংক খাতে এবং সম্প্রতি বিমা খাতের শেয়ারের পেছনে বিনিয়োগকারীরা ছুটছে বিধায় অন্যান্য খাতের শেয়ারে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তবে বস্ত্র খাতের শেয়ারে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চারটি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ করেছে। কোম্পানিগুলো হলো জাহিন স্পিনিং, আএনএ স্পিনিং, আরগন ডেনিম ও ইভিন্স টেক্সটাইল (ইটিএল)। যদিও এসব কোম্পানি আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। কিন্তু এ খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি সমাপ্ত হিসাববছরে ভালো মুনাফা করেছে এবং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের মতে, এ খাতের কোম্পানিগুলো যখন বড় আকারে ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা শুরু করবে, তখন বিনিয়োগকারীরা এ খাতের শেয়ারেও হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, বর্তমানে শেয়ারবাজারে ২০ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ২৯৯টি। এর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে বস্ত্র খাত শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এ খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৪৮টি। বস্ত্র খাতের পরের অবস্থানে রয়েছে বিমা খাত। এ খাতে কোম্পানির সংখ্যা ৪৭টি। ৩৬টি ইউনিট ফান্ড নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড। প্রকৌশল খাত ৩৬টি কোম্পানি নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। আর ৩০টি কোম্পানি নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারের বৃহত্তম এ বস্ত্র খাতে চলছে দরপতনের প্রতিযোগিতা। এ সময়ে এ খাতের এক-চতুর্থাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ১০ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে বস্ত্র খাতে মাত্র চারটি কোম্পানির দর বেড়েছে। কোম্পানিগুলো হলো এপেক্স স্পিনিং, সাফকো স্পিনিং, সায়হাম টেক্সটাইল ও পিটিএল। এর মধ্যে সায়হাম কটনের দর বেড়েছে পাঁচ দশমিক ৩৬ শতাংশ, এপেক্স স্পিনিংয়ের দর বেড়েছে চার দশমিক ৩৬ শতাংশ, সায়হাম টেক্সটাইলের দর বেড়েছে দুই দশমিক ৫০ শতাংশ এবং পিটিএলের দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অক্টোবর মাসেও বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরের শেষ কার্যদিবসে সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলের দর ছিল ১১ দশমিক ৫০ টাকায়। গত বৃহস্পতিবার কমে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৫০ টাকায়। তুংহাই ১৭ দশমিক ৩০ টাকা থেকে নেমে আসে ১৫ টাকায়, আনলিমা ইয়ার্ন ৩৩ টাকা থেকে নেমে আসে ৩২ দশমিক ৬০ টাকায় এবং ড্রাগন ২২ দশমিক ৩০ টাকা থেকে নেমে আসে ১৯ দশমিক ৮০ টাকায়।
গত ১২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ‘ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) বিল, ২০১৭’ উত্থাপন করেন। পরে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে চলতি বছরের ৮ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির খসড়া অনুমোদন পায়। এর পর থেকেই অর্থনীতিবিদরা সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন। এ আইন হলে বেসরকারি ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র কায়েমের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করেন তারা।
সম্প্রতি তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারদর বাড়তে থাকে। বাড়ছে এ খাতের লেনদেনের পরিমাণ। এ প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘কিছুদিন আগে ব্যাংক আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় এক পরিবার থেকে চার পরিচালক থাকবেন। এজন্য পরিচালকরা এখন পজিশন নিচ্ছেন। তাই কেনার একটা চাপ আসছে ব্যাংক খাত থেকে।’
Add Comment