ব্যাংক খাতের অদক্ষতায় বছরে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংক খাতের অদক্ষতার ফলে বর্তমানে জিডিপির প্রায় এক শতাংশ বার্ষিক ক্ষতি হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকঋণের একটা বড় অংশ অপচয় হচ্ছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দ্বারা সমর্থিত অনিয়মের কোনো দৃশ্যমান শাস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারায় এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এমন বিষয় তুলে ধরা হয়। রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে গতকাল অনুষ্ঠিত সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। পরে ত্রৈমাসিক এ পর্যালোচনায় দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির পথে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়।

সানেমের আলোচনায় বলা হয়, ব্যাংক খাতের চলমান সাম্প্রতিক সময়কার সংকট অনেক দিন ধরে চলমান কাঠামোগত সমস্যার ফল। এ খাতে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। খাতটিতে একের পর এক কেলেঙ্কারি প্রকাশ পেয়ে চলেছে। এর ফলে ব্যাংক খাতে মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। সামগ্রিক অব্যস্থাপনার ফলে সৃষ্ট সংকট বিভিন্ন সময় তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ফলে সাময়িক সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এতে কোনো স্থিতিশীল সমাধান আসছে না বলে মনে করছে সানেম।

সানেমের গবেষণায় বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের অতিরিক্ত ঋণদানের কারণে ঋণ-আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) ৯০ শতাংশের ওপরে দাঁড়ায়। এ ধরনের অত্যধিক ঋণদানের কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে।

রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো তাদের তহবিলের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখার সিদ্ধান্ত এবং ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) এক শতাংশ কমিয়ে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশে আনার ফলে ব্যাংক খাতে বড় সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছে সানেম। এছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয়।

অনুষ্ঠানে উল্লেখ করা হয়, আশা করা যায় ২০২৪ সাল নাগাদ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। এরপর ২০২৭ সালের পর  ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত ও চীনের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রবেশের সুবিধা হারাবে। যার ফলে দেশের রফতানি কমে যাবে।

অতএব, আগামী ৯ বছরে সুবিধাগুলো ছাড়া সক্ষমতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিবেশ না থাকা, বর্ধিত রফতানি হার না থাকা, প্রতিযোগিতামূলক বাজারের অনুপস্থিতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো যথেষ্ট মজবুত না থাকাÑএ সমস্যাগুলো আমাদের দেশে বিদ্যমান। দেশে বৃহৎ পরিসরে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, উল্লেখযোগ্যভাবে পণ্য রফতানিতে বৈচিত্র্য আনয়ন, প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো সুদৃঢ় করা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক  প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বস্তুনিষ্ঠ সেবা টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০