ব্যাংক খাতের দুরবস্থায় বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে না

গত পাঁচ বছর ধরে দেশে বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়েনি। কিন্তু জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে আট শতাংশের বেশি। বিনিয়োগের খারাপ অবস্থা হলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আট শতাংশের বেশি ধরা হলো কেন? এ বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত। গত আট থেকে ১০ বছর ধরে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে হ-জ-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। হলমার্ক থেকে শুরু করে বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাংকসহ সার্বিকভাবে যে অবস্থা সেটি ইতোমধ্যে সরকারও স্বীকার করেছে। বিনিয়োগের সঙ্গে ব্যাংক খাত অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ব্যাংক খাতের এ অবস্থা দিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কনসালটিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাব্বির আহমেদ, দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আব্দুর রহিম হারমাছি।
সাব্বির আহমেদ বলেন, একদিকে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আট শতাংশের বেশি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটি দেশ ও বিশ্বেজুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগ যা ছিল তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত পাঁচ বছর ধরে বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। কোনো গ্রোথ দেখা যাচ্ছে না। এটি স্থির অবস্থানে রয়েছে। কথা হচ্ছে কেন এ রকম হচ্ছে? বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত আলোচনা-সমালোচনা করে আসছেন। তবে আমি এটিকে নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখব। প্রাথমিক অবস্থায় যখন একটি কোম্পানি শুরু করা হয় এবং ছোট পরিসরে থাকে, তখন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও বোর্ডের সদস্যদের নজরে থাকে। যখন কোম্পানিটি বড় হতে থাকে তখন দু-চারজন দিয়ে কোম্পানিটি নজরে রাখা বা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। ১০ বছর আগে যে কোম্পানির সম্পদমূল্য ছিল ২০০ কোটি টাকা, এখন সেই কোম্পানিটির সম্পদমূল্য দুই হাজার কোটি টাকা। আবার যে কোম্পানির সম্পদমূল্য ছিল ৫০০ কোটি টাকা, এখন সেটির মূল্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অবশ্যই সেখানে তাদের ব্যবস্থাপনার পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। বর্তমান সময়ে দেশের ব্যবস্থাপনায় পেশাগত দক্ষতার বেশ অভাব দেখা যাচ্ছে। তার প্রমাণ বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে। অনেক কোম্পানির সিএফওসহ অনেক দক্ষতাসম্পন্ন লোক বাহির থেকে আনা হচ্ছে। এ রকমটা হচ্ছে কেন? এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তার মানে হচ্ছে ব্যবস্থাপনায় পেশাগত দক্ষতার অনেক ঘাটতি রয়েছে। এখানেই মূল সমস্যা।
জাকির হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে ও বাজেটের আকার যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে বিবেচনা করলে বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ নয়। যদি পরিমাণ হিসেবে বিবেচনা করি, সে হিসেবে বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে কিন্তু অর্থনীতির আকারের সঙ্গে তুলনা করে সেভাবে বাড়ছে না। তাহলে সমস্যা কোথায়। বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধানে বেশকিছু সমস্যা বেরিয়ে এসেছে। যেমন, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং জমির সংকট। সময়মতো গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে সমস্যা, আবার বিদেশি বিনিয়োগকারী জমি পান না। বিভিন্ন বন্দরে সেবা এবং হাইওয়ে রোডের সমস্যা প্রভৃতি দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি সরকার এ বিষয়ে নজরদারিতে নিয়েছে। যেমন নতুন যে অর্থনৈতিক জোন করেছে সেখানে যে বিদ্যুৎ সংকট ছিল তা সমাধার দিকে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও বিনিয়োগ বাড়ছে না। এখানে মনে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোনো না কোনোভাবে আস্থাহীনতা কাজ করছে। সেটি হতে পারে বিভিন্ন কারণে।
আব্দুর রহিম হারমাছি বলেন, গত তিন অর্থবছরে আট শতাংশের বেশি জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরেছে। আবার গত পাঁচ বছর ধরে বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়েনি। কিন্তু জিডিপির গ্রোথ ধরা হয়েছে আট শতাংশের বেশি। কথা হচ্ছে বিনিয়োগ বাড়েনি এবং বিনিয়োগের খারাপ অবস্থা, তাহলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আট শতাংশের বেশি ধরা হলো কেন? এ বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করি। আবার গত আট থেকে ১০ বছর ধরে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে একটি হ-জ-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। হলমার্ক থেকে শুরু করে বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাংকসহ সার্বিকভাবে যে অবস্থা সেটি এরই মধ্যে সরকারও স্বীকার করেছে। বিনিয়োগের সঙ্গে ব্যাংক খাত অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ব্যাংক খাতের এ অবস্থা দিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে না। সেক্ষেত্রে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানো হবে এটি ভাবা অমূলক ছাড়া কিছুই না। যদি জিডিপির গ্রোথ ধারাবাহিকভাবে বাড়াতে চান, সেক্ষেত্রে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ভেবেছিলাম নতুন সরকার প্রথমেই ব্যাংক খাত নিয়ে বিবেচনা করবে এবং অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক খাত সংস্কার করা হবে এবং আর একটি টাকাও খেলাপি লোন হবে না, তার কথাবার্তায় সেটি লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু গত আট মাস ধরে তাদের কর্মকাণ্ডে সেই আশার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। এতে বোঝা যাচ্ছে তারা ব্যাংক খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে আন্তরিক নয়।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০