Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 8:35 pm

ব্যাংক খাতের মূল সমস্যা সুশাসনের অভাব

একটি দেশের অর্থনীতির মূল কর্মকাণ্ড ব্যাংক ও পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যাংক খাতে বর্তমানে যে অবস্থা তাতে করে এ খাতের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। এ খাতের মূল সমস্যা সুশাসনের অভাব। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালকদের নিজস্ব আত্মীয়স্বজনরা আসছেন। এতে করে অরাজকতা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখনই যদি এটিকে শক্ত হাতে প্রতিহত না করে তাহলে সামনে ব্যাংক খাতে অরাজকতা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এবং আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট মোহম্মদ সেলিম।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংক খাত ভালো অবস্থায় নেই এবং এ খাতের কিছু কেলেঙ্কারির খবর বিভিন্ন মিডিয়াতে দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকা অনিয়মের খবর। বেসরকারি ব্যাংকগুলো যে খুব ভালো অবস্থায় আছে তা কিন্তু নয়। তবে কিছু ব্যাংক ভালো অবস্থায় আছে। অনেক ব্যাংকের মন্দ ঋণের (এনপিএল) পরিমাণ পাঁচ-সাত শতাংশ দেখাচ্ছে, তা আসলে কতটুক যথার্থ সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে। কোনো জালিয়াতি আছে কি নাÑসেটি দেখতে হবে। গত বছর চারটি ব্যাংকের প্রভিশনিং করা উচিত ছিল তা না করে উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় চার বছর সময় দিয়েছে। এতে ব্যাংকের যে প্রকৃত চিত্র বা মুনাফা তা সম্পূর্ণভাবে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। যেখানে দু-একটি ব্যাংকের লোকসান হতো অথচ সেখানে তারা শর্তভঙ্গ করে প্রফিট দিচ্ছে, তার ওপরে আবার ডিভিডেন্ডও দিচ্ছে। এ ধরনের অনিয়ম যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমর্থন করে তাহলে তো স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ ও আমানতের ক্ষেত্রে যদি সুদহার ছয় শতাংশ ধরা হয় তাহলে হয়তো চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে কিন্তু সরবরাহ নিয়মিত বাড়বে। তখন চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে অমিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
মোহম্মদ সেলিম বলেন, বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে যাওয়ার চিন্তা করছে। একটি দেশের অর্থনীতির মূল কর্মকাণ্ডই কিন্তু ব্যাংক ও পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যাংক খাতের বর্তমান যে অবস্থা তাতে এ খাতের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। সম্প্রতি আমি নতুন প্রজšে§র ভালো মানের একটি ব্যাংক থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকার পে-অর্ডার উত্তোলন করতে পারিনি। তিন বার ডিফল্টার করা হয়েছে। পরবর্তীতে সচিব পর্যায় থেকে ফোন করিয়েও টাকা তুলতে পারিনি। এ যদি হয় ব্যাংকের অবস্থা তাহলে জনগণের আস্থা কোথায় থাকবে? ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই জনগণের অধিকার বা সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের। আমি মনে করি, ব্যাংক খাতের মূল সমস্যা সুশাসনের অভাব। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালকদের নিজস্ব আত্মীয়স্বজন আসছেন। এসব দেখার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা মানে বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংক এখনই যদি এটিকে শক্ত হাতে প্রতিহত না করে তাহলে সামনে ব্যাংক খাতে অরাজকতা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এটিকে একটি পর্যায়ে নিয়ে আসা। তা না হলে কোনোদিনই দেশের অর্থনীতি লক্ষ্যমাত্রার স্তরে যাবে না।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম