রেজাউল করিম খোকন: আবারও আলোচনায় এসেছে ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি। ইসলামী ব্যাংক থেকে কাগুজে কোম্পানিকে ঋণ দেয়ার ঘটনা প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আগে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তার আদায় ও বিচারের কতটা অগ্রগতি হয়েছে, সে বিষয়টিও সামনে আসছে। গত এক যুগের প্রধান ঘটনাগুলো তালিকা করলে প্রথমেই আসবে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা। এর পরই বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি, জনতা ও প্রাইম ব্যাংকে বিসমিল্লাহ গ্রুপের অনিয়ম, জনতা ব্যাংকের অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ অনিয়ম। এ ছাড়া আলোচিত ঘটনাগুলোর অন্যতম ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়ম, ইউনিয়ন ব্যাংকের বেনামি ঋণ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের ঘটনা। আবার ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের ঘটনা কয়েক বছর ধরেই আলোচনায়। এসব অনিয়মে ভূমিকা রেখেছে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জোরপূর্বক কয়েকটি ব্যাংকের মালিকানা দখল। ২০১১ সালে হলমার্কসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (হোটেল শেরাটন) শাখা থেকে ঋণের নামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়, যা নিয়ে তখন বড় আলোচনা তৈরি হয়। বাতিল করা হয় সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আটক করা হয় সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও হলমার্কের মালিককে। সেই ঘটনার বিচারকাজ এখনো চলছে। টাকাও আদায় করতে পারছে না সোনালী ব্যাংক। ২০১১-১২ সালে বেসিক ব্যাংকের প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রধান ভূমিকা রাখেন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু। তবে শেখ আবদুল হাইয়ের কিছুই হয়নি। ব্যাংকও বড় অংশ টাকা আদায় করতে পারেনি। ২০১২-১৩ সালে বিসমিল্লাহ গ্রুপ কয়েকটি ব্যাংক থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ঘটনা প্রকাশের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঋণগ্রহীতারা। ওই কেলেঙ্কারির ঘটনায় ক্ষতিতে পড়ে জনতা, প্রাইম, যমুনা, প্রিমিয়ার ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক। অ্যাননটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদারভাবে ঋণ দেয় জনতা ব্যাংক। এক গ্রাহককেই মাত্র ছয় বছরে তারা দেয় পাঁচ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা। নিয়মনীতি না মেনে এভাবে ঋণ দেয়ায় বিপদে ব্যাংক এবং গ্রাহকও ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে পাওনা এখন সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি, যার বড় অংশই এখন খেলাপি। ভুয়া রপ্তানি নথিপত্র তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেয়া হয়েছে। এভাবে সরকারের নগদ সহায়তা তহবিল থেকে এক হাজার ৭৫ কোটি টাকা নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। অপকর্মে সহায়তা করার পাশাপাশি ক্রিসেন্ট গ্রুপকে অর্থায়নও করেছে জনতা ব্যাংক। ক্রিসেন্টের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা দুই হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। বিদেশে রপ্তানির এক হাজার ২৯৫ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। ফলে আটকে গেছে বড় অঙ্কের অর্থ। এ ঘটনায় কারও বিচার হয়নি। অনুমোদন পাওয়ার পরই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে ফারমার্স ব্যাংক। ফলে একসময় গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। সরকারের উদ্যোগে ব্যাংকটি বাঁচাতে মূলধন সহায়তা দেয় সরকারি চার ব্যাংক ও একটি বিনিয়োগ সংস্থা। এখন ঘুরে দাঁড়াতে নাম পরিবর্তন করে ফারমার্স ব্যাংক হয়েছে পদ্মা। তবে ঋণের টাকা আদায় করতে পারছে না। ভল্ট কেলেঙ্কারির পর ঋণেরও বড় অনিয়ম হয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংকে। শুধু ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে কোম্পানি গঠন করে ঋণের বড় অংশই বের করে নিয়েছে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান। আবার অনেক ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সও ছিল না। কাগুজে এসব কোম্পানিকে দেয়া ঋণের বেশিরভাগেরই খোঁজ মিলছে না এখন। ফলে এসব ঋণ আদায়ও হচ্ছে না। ইউনিয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার যোগ্য বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে ব্যাংকটির আমানত ৩৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা ও বিতরণ করা ঋণ ছিল ৩১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের পাঁচ দশমিক ১৮ শতাংশ। কিন্তু ২০২১ সালভিত্তিক পরিদর্শন করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এসআইবিলের আরও পাঁচ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হওয়ার যোগ্য। এতে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে সাত হাজার ২৯৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ২৩ শতাংশের বেশি। পরিচালকদের মধ্যে কোন্দল, ক্রেডিট কার্ডে ডলার পাচার, বড় অঙ্কের সুদ মওকুফসহ নানা কারণে সংকটে ন্যাশনাল ব্যাংক। ফলে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণও আটকে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যাংকটিকে উদ্ধারে সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়ে পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৭ সালে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় জোরপূর্বক পরিবর্তন আনা হয়। এ সময় দুই ব্যাংকের এমডিদেরও পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। আর এসব পরিবর্তনে তড়িঘড়ি সম্মতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পর থেকে ব্যাংক দুটিতে বড় অনিয়ম শুরু হয়।
বড় ঋণগ্রহীতাদের খেলাপি হওয়ার প্রবণতাও বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঋণ দেয়া হচ্ছে জামানত ছাড়া। অনেকেই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হচ্ছেন। একই ব্যক্তি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছেন। দেশে খেলাপি ঋণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাই এর প্রধান কারণ। দেশে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞার। দেয়া হয়েছে একাধিকবার ঋণ তফসিলের সুবিধা। ইতিহাসে ঋণখেলাপিদের সবচেয়ে বড় সুবিধা দেয়া হয় ২০১৯ সালে। ১৯৯০ সালেও দেশে খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। সেই খেলাপি ঋণ এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গত ১৪ বছরে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসেই (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। এই হিসাবে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে খেলাপি বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের হার এখন ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রতিযোগী এবং তুলনীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের হারই সবচেয়ে বেশি। কেবল ভারতের খেলাপি ঋণের হার বাংলাদেশের কাছাকাছি, আর সবার অনেক কম। এই খেলাপি ঋণই ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। এখানে বছরের পর বছর ধরে খেলাপিদের নানা ধরনের ছাড় দেয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলানো হয়েছে বারবার। আইন সংশোধন করে একাধিকবার ঋণ তফসিলের সুবিধা দেয়া হয়েছে। আর এসব সুযোগ-সুবিধা নিয়েই বড় বড় ঋণখেলাপি খেলাপির তালিকা থেকে বাইরে থেকে গেছেন। হয়েছেন আরও ক্ষমতাবান। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পরে অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান জাতীয় সংসদে খেলাপি ঋণগ্রহীতার নাম প্রকাশ করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের পরে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া তালিকা প্রকাশ করে প্রভাবশালী ঋণখেলাপিদের রোষানলে পড়েছিলেন। সেই প্রভাবশালীরাই এখন সরকারের দেয়া নানা সুযোগ নিয়ে খেলাপির তালিকা থেকে বের হয়ে গেছেন। এমনকি তারাই এখন খেলাপি ঋণের ছাড় কীভাবে দেয়া হবে, সেই নীতিমালাও তৈরি করে দিচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে প্রধান করে গঠিত ব্যাংক সংস্কার কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল ১৯৯৯ সালে। কমিটি তাদের রিপোর্টে বলেছিল, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বণ্টনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহƒত হয়েছে, যা খেলাপি ঋণের অন্যতম কারণও। স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর বিরোধিতা ব্যাংক খাত সংস্কারের সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। এ কারণে সংস্কার কর্মসূচি সফল করতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার। মূলত এই অঙ্গীকারই কখনো দেখা যায়নি বলেই খেলাপি ঋণ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলেছিল, বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের মধ্যে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার প্রবণতার শিকড় অত্যন্ত গভীরে। আবার প্রভাবশালী, ওপর মহলে ভালো যোগাযোগ আছে এবং ধনীÑএমন কিছু ব্যবসায়ী ঋণ ফেরত দেয়ার কোনো তাগিদই অনুভব করেন না। বাংলাদেশে আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও এখন নিচ্ছেন প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান এসব ঋণগ্রাহক। আইএমএফ আরও বলেছিল, ‘বাংলাদেশে খেলাপি আড়াল করে রাখা আছে। খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ তার তুলনায় অনেক বেশি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ হবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। আইএমএফের এই বক্তব্য ছিল তিন বছর আগের। এখন হিসাব করলে প্রকৃত খেলাপি হবে চার লাখ কোটি টাকারও বেশি। বিশ্বব্যাংক গত অক্টোবর মাসে ‘চেঞ্জ অব ফ্যাব্রিক’ নামে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা বলেছে, দুর্বল করপোরেট শাসন, আইনের প্রয়োগের দুর্বলতা এবং স্বচ্ছতার অভাব ব্যাংক খাতকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। এতে ব্যাংক খাতের অপব্যবহারের সুযোগও বেড়েছে। অনেক আর্থিক কেলেঙ্কারি এবং উচ্চ খেলাপি ঋণ এরই প্রমাণ।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হওয়া সংজ্ঞা হচ্ছে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা। দেশে প্রথম খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। তবে পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞাটি ছিল ১৯৯৪ সালের। এর পর থেকে যতগুলো সরকার এসেছে, সবাই এর সংজ্ঞা নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খেলাপি হওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আবার খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ কতবার পুনঃতফসিল করা যাবে, তারও পরিবর্তন করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর শুরুতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। যেমন, ২০১২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করে বলেছিল, কোনোভাবেই তিনবারের বেশি ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালাটিও ধরে রাখতে পারেনি। প্রভাবশালীদের তদবির ও চাপে পিছু হটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে তিন মাস সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। প্রভাবশালী ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে ২০১৫ সালে। সে সময় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ এক স্কিম হাতে নেয়া হয়। তখন নিয়ম ছিল তিনবারের বেশি ঋণ পুনঃতফসিল করা যায় না। কিন্তু বেশিরভাগ প্রভাবশালী উদ্যোক্তাই তিনবার সুযোগটি নিয়েও খেলাপি হয়ে পড়েছিলেন। এরপরেই ঋণ পুনর্গঠন নামে নতুন এক সুবিধা দেয়া হয়। ওই সুবিধার আওতায় দেশের বড় ১১টি শিল্পগ্রুপের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছিল। তারপরও এসব গ্রুপের বেশির ভাগই ঋণের কিস্তি আর পরিশোধ করেনি। ২০১৮ সালে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞার আবার বদল হয়। ঋণ পরিশোধের সময় আরও তিন মাস বাড়ানো হয়। একই সময় ঋণ অবলোপন বা রাইট অফের ক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। তবে ২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে ঋণখেলাপিদের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধাটি দেন। সে সময় দুই শতাংশ কিস্তি দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ রাখা হয়। নতুন নিয়মে ঋণ পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় দেয়া হয়, এর মধ্যে প্রথম এক বছর কোনো কিস্তি দিতে হয়নি। সেই সুযোগ নেয়া বেশিরভাগই পরে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। খেলাপি ঋণ নিয়ে এবার সত্যিকারের নতুন এক বিপদে পড়েছে ব্যাংক খাত। এত দিন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খেলাপি ঋণ বাড়তে দেয়া হয়েছে, আর এখন পরিস্থিতি সামাল নেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ব্যাংক খাতে। এখন দুষ্ট ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেক ভালো ব্যবসায়ীও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে সামনে খেলাপি ঋণ আরও বেশি বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এখন অর্থনৈতিক সংকট চলছে বিশ্বব্যাপীই। বিশ্বমন্দার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। ডলারের দামের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। ফলে উৎপাদিত পণ্য সেভাবে বিক্রিও হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীদের নগদ টাকার প্রবাহ কমে গেছে। আয় ও ব্যয়ের হিসাবে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ব্যবধান। এতেই ব্যাংকের ঋণের কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে তারা। করোনা মহামারির কারণে এর আগে ঋণ পরিশোধে বড় ছাড় দিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, যা চলতি বছরে তুলে নেয়া হয়। এর ফলে দুই বছর ঋণ পরিশোধ না করেও অনেকেই ভালো গ্রাহকের তালিকায় ছিল। আর এখন ছাড় উঠে যাওয়ার পর অনেকেই ঋণ পরিশোধ করছেন না। আবার যেসব ঋণ এর আগে খেলাপি হওয়ার কারণে পুনঃতফসিল করা হয়েছিল, সেই ঋণের কিস্তিও শোধ হচ্ছে না। এতেও বাড়ছে খেলাপি ঋণ। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করছে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ব্যাংক খাতকে খলনায়ক হিসেবেই মনে করা হয়েছে। সুশাসনের প্রচণ্ড দুর্বলতা আর্থিক খাতে বড় বড় কেলেঙ্কারির জš§ হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে সাধারণ মানুষের, আমানতের নয়-ছয় হয়েছে। লাভবান হয়েছেন কেবল ঋণখেলাপিরাই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহল থেকে ঋণখেলাপিদের ব্যাংক ডাকাত বলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পোষকতা বন্ধ হয়নি কখনোই। ফলে কেবলই বাড়ছে খেলাপি ঋণ।
২০০৯ সালে দেশের আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারির সূচনা হয়েছিল। ওই বছরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। সদ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। জাতীয় পার্টির মধ্যম সারির একজন নেতা, শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চুকে দেয়া হয় বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ। মূলত নির্বাচনে বঞ্চিত, পরাজিত এবং নানা পদপ্রত্যাশীদেরই বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্যই সে সময় ব্যাংককে ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপরই সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি, জনতা ব্যাংকের বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারিসহ বড় বড় অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। তবে কেলেঙ্কারির দিক থেকে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বেসিক ব্যাংক। এই ব্যাংক থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়। অথচ এই কেলেঙ্কারির নায়ক শেখ আবদুল হাই এখনও আরাম-আয়েশে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন সংস্থার সবকটি তদন্ত প্রতিবেদনেই বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য শেখ আবদুল হাইকেই দায়ী করা হয়েছিল। অথচ তার কোনো সম্পৃক্ততা এখনও খুঁজে পায়নি দুদক। এ নিয়ে নানা মহলে ১০ বছর ধরে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি জাতীয় সংসদে উঠেছে। আদালতও বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার কথা বলেছেন, কিন্তু কিছুই হয়নি শেখ আবদুল হাইয়ের। কারণ তার খুঁটির জোর বেশ শক্ত, খুবই মজবুত। বেসিক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ১৯৮৯ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিল্পসচিবই পদাধিকারবলে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হতেন এবং পর্ষদের পরিচালকও নিয়োগ দেয়া হতো বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের। নিয়মনীতি মেনে সরকারি মালিকানায় যে একটি ব্যাংক ভালোভাবে চলতে পারে, তার বড় উদাহরণ ছিল বেসিক ব্যাংক। পরিস্থিতি পাল্টে যায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। নীতি বদলে ব্যাংকটির পর্ষদে নিয়োগ দেয়া হয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের। তখন থেকে বেসিক ব্যাংকের পতনের শুরু। বেসিক ব্যাংক থেকে যারা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা ব্যাংকের টাকা, জনগণের টাকা লুটপাট, আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন, তারা জাতির শত্রু। অর্থ লুটপাট ও আত্মসাতের মামলা দ্রুত ও সামারি ট্রায়াল (সংক্ষিপ্ত বিচার) হওয়া উচিত। যারা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেন, তাদের শুটডাউনের মতো শাস্তি হওয়া উচিত। আর বেশ কয়েক বছর হয়ে গেলেও বেসিক ব্যাংকের কোনো মামলায় এখনও অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়নি। তদন্ত শেষ না হওয়ার কারণ কী? তদন্ত কি অনন্তকাল ধরে চলবে? এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে চিঠি-চালাচালির সময়েই চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ আবদুল হাইয়ের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছিল। বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতির গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রুল শুনানির সময় দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেছেন, বেসিক ব্যাংক থেকে যারা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা ব্যাংকের টাকা, জনগণের টাকা লুটপাট, আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন, তারা জাতির শত্রু। অর্থ লুটপাট ও আত্মসাতের মামলা দ্রুত ও সামারি ট্রায়াল (সংক্ষিপ্ত বিচার) হওয়া উচিত। যারা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেন, তাদের শুটডাউনের মতো শাস্তি হওয়া উচিত। আর বেশ কয়েক বছর হয়ে গেলেও বেসিক ব্যাংকের কোনো মামলায় এখনও অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়নি। তদন্ত শেষ না হওয়ার কারণ কী? তদন্ত কি অনন্তকাল ধরে চলবে? সন্দেহ নেই বেসিক ব্যাংকের তদন্ত দুদক অনন্তকাল ধরেই চালাবে। কারণ পৃষ্ঠপোষকতা বা রাজনৈতিক সমর্থন থাকলে আদালতের ভাষায় ‘সামারি ট্রায়াল’ বা ‘শুটআউট’ তো দূরের কথা, অভিযুক্তই হতে হয় না। সুতরাং শেখ আবদুল হাইকে ধরার সাধ্য আসলে কারও নেই।
অর্থ আত্মসাৎ, ঋণখেলাপি এবং লুটপাটে সহায়তাকারীদের কঠোর শাস্তি দেয় চীন ও ভিয়েতনাম। ব্যাংক থেকে প্রায় ১১ কোটি ডলার আত্মসাতের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হেংফেং ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াং শিউয়ানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন চীনের আদালত। একইভাবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে চার কোটি ৩০ লাখ ডলার ঘুষ নেয়ার অভিযোগে ব্যাংক অব ইনার মঙ্গোলিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াং চেঙ্গলিন, ২০১০ সালে চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ওয়াং ই এবং ২০০৫ সালে ব্যাংক অব চায়না-হংকংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান লিউ জিনবাওকে অর্থ আত্মসাতের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। ভিয়েতনাম ২০১৪ সালে তিনজন ব্যাংকারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন রাষ্ট্রমালিকানাধীন ভিয়েতনাম ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা। তার কারণে ব্যাংকের ক্ষতি ৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চীনে ঋণখেলাপিরা ক্রেডিট কার্ডও ব্যবহার করতে পারেন না, বিমানের টিকিট তাদের কাছে বিক্রি করা হয় না, তারা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীও থাকতে পারেন না। আর বাংলাদেশে ঘটে উল্টো। এখানে খেলাপিদের দেয়া হয় নানা ধরনের সুবিধা। এ কারণেই প্রয়াত ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সরকারকে বলতেন, ‘খেলাপিবান্ধব সরকার।’ শুরু থেকেই খেলাপিবান্ধব পরিবেশের কারণে দেশে হয়েছে একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারি, বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় দেশে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সেই খেলাপি ঋণ এখন এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাস্তবে খেলাপি ঋণ দ্বিগুণের বেশি। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ছাড়াও গত ১৪ বছরে নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে আত্মসাৎ করা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ। আর কত টাকা পাচার হয়েছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যানই নেই। যদিও ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি বলছে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। সব মিলিয়ে অর্থ লুটপাটের জন্য রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কোনো শাস্তিই এখানে হয় না। চুনোপুঁটিদের কেবল জেলে থাকতে হয়। অন্যরা থাকেন বহাল তবিয়তে, আরও বেশি প্রভাবশালী হয়ে। ফলে আদালত যা-ই বলুন না কেন, শেখ আবদুল হাইয়ের মতো যারা আছেন, তাদের চিন্তিত হওয়ার আসলে কিছু নেই।
অথচ পাবনায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সামান্য টাকার জন্য সাধারণ কৃষককে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা অমানবিক। অথচ দেশে রাঘববোয়ালদের কাছ থেকে খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারের কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেই, বরং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের তোয়াজ করে চলা হয়। বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের কাছ থেকে ওই কৃষকেরা ঋণ নিয়েছিলেন। অবশ্য ঋণের টাকা পরিশোধ করার পরও তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে দাবি কৃষকদের। করোনার সময় কৃষকেরা দেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। অথচ ২৫ হাজার টাকার জন্য তাদের কোমরে দড়ি দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যদিও গ্রেপ্তার হওয়া কৃষকের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করেছেন। তবে প্রশাসন গরিব কৃষকের কথা আমলে নেয়নি। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পার করে বাংলাদেশ ৫১তম বিজয় দিবস উদ্যাপন করছে এবার। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা এবং লক্ষ্যকে সামনে রেখে এদেশের লাখো কোটি মানুষ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়েছিল, সেই চেতনার বাস্তবায়ন কী হয়েছে এখনও, শোষণমুক্ত সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা কি কায়েম হয়েছে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে? এ প্রশ্নগুলো এখন আমাদের নাড়া দিয়ে যায় বারবার। যখন বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা তথা আর্থিক খাতে নানা কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো চোখের সামনে একের পর এক আসছে, যখন ব্যাংক খাতে খেলাপি বেড়ে গিয়ে ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লুটপাটের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংককে শোচনীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছেন একশ্রেণির প্রভাবশালী অসৎ টাউট-বাটপাড় চরিত্রের ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সমাজের তথাকথিত হোমরাচোমরা ব্যক্তিবর্গ। যখন গ্রামের অতি সাধারণ দরিদ্র কৃষক ব্যাংক থেকে নিয়ে তা যথাসময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় পুলিশ তাদের কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় আটক করে নিয়ে যায়। অথচ বড় বড় খেলাপির হাজার হাজার কোটি টাকা অনাদায়ী থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে তেমন জোরালো কোনো ব্যবস্থা নিতে সংকুচিত হয় বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বড় বিচিত্র মনে হয় স্বাধীন বাংলাদেশের এই বৈপরীত্যমূলক ব্যবস্থা। এর জন্যই কি বাংলাদেশ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর? এ প্রশ্ন জাগে এদেশের কোটি কোটি মানুষের হƒদয়ে। কে দেবে তার যথাযথ জবাব? নাকি তা নিভৃতে কেঁদে যাবে শুধু।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক