ব্যাংক খাতে দেখা যাচ্ছে অশনি সংকেত

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে ব্যাংক। উৎপাদন, আমদানি-রফতানি সবই নির্ভর করে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ওপর। আর এ দুটো খাত যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা না যায়, তাহলে অর্থনীতির অন্য দিকগুলো ভালোভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নড। আগে অন্যান্য খাতের তুলনায় ব্যাংক ও অর্থিক খাতেই ভালো নিয়ন্ত্রণ ছিল। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক খাতে পুরো অশনি সংকেত দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে কতগুলো বড় কেলেঙ্কারি হয়েছে এবং এটি সংক্রামক ব্যাধির মতো ধীরে ধীরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোয়ও ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আগের বছরের তুলনায় বিশেষ করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সূচকগুলো যদি দেখি, তাহলে দেশের প্রবৃদ্ধির নির্ণয়ক সূচকগুলোর বেশিরভাগই পতনমুখী অবস্থায় ছিল। এর মধ্যে রেমিট্যান্সে বড় ধস নেমেছিল এবং এক্সপোর্ট গ্রোথ যথেষ্ট কমে গিয়েছিল। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ দুটি বিষয় বড় ভ‚মিকা পালন করে। এছাড়া বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির আনুপাতিক হার হিসেবে ২১ থেকে ২২ শতাংশের মধ্যে অনেক দিন যাবৎ স্থবির হয়ে আছে। কাজেই এ সূচকগুলো খুব একটা সন্তোষজনক নয়। সাম্প্রতিককালের জুলাই থেকে আগস্টের  ডেটাতে দেখা যাচ্ছে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি খাতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু কি অবস্থা দাঁড়াবে, তা এ দু-তিন মাসের ডেটা দিয়ে বলা মুশকিল। সাম্প্রতিক এ উন্নতি টেকসই হবে বলে আমি খুব আশাবাদ পোষণ করতে পারছি না। কারণ অনেক সময় দেখা যায়, রাজনৈতিক কোন্দল বা হরতালের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ থাকে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়; বিশেষ করে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। অন্যদিকে রেমিট্যান্স খাতে আমি খুব বড় ধরনের উল্লম্ফন আশা করি না। ব্যাংক খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এ খাতে দু-একটি ইতিবাচক দিক আছে। একটি হচ্ছে ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ও আমাতনকারীর সুদহার এ দুটির ব্যবধান একটু কমে এসেছে। আরও একটি বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেশ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু শ্রেণিকৃত ঋণের মাত্র ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা ডিসেম্বর ২০১৫ সালে ছিল আট দশমিক ৭৯ শতাংশ। ফলে এটি ব্যাংক খাতের জন্য একটি ঝুঁকির দিক। আর একটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে কেউ যদি দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির দিকে নজর দেন, তাহলে প্রথমেই চোখে পড়বে মোটাদাগে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য আগের মতো আছে কি না। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল, এখনও এগোচ্ছে; কিন্তু গতি মন্থর হয়ে এসেছে। বড় সূচকগুলো ছাড়াও দেশে কর্মসংস্থান কেমন হচ্ছে, প্রকৃত উৎপাদন ব্যবস্থা কেমন এবং এগুলোর প্রতিফলনও আসছে বাজারে। বাজারদর বাড়ছে। অর্থাৎ সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও তার নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতির বিভিন্ন দিক সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না? আমার মনে হয়, এগুলোয় অনেক ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে। আর এগুলোর প্রতিফলন সামষ্টিক অর্থনীতি, প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপরও পড়ছে। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে ব্যাংক। উৎপাদন, আমদানি, রফতানি এগুলো সবই নির্ভর করে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ওপর। আর এগুলোই যদি সঠিকভাবে চালাতে না পারি, তাহলে অর্থনীতির অন্য দিকগুলো ভালোভাবে চালানো সম্ভব নয়। আগে অন্যান্য খাতের তুলনায় ব্যাংক ও আর্থিক খাতেই ভালো নিয়ন্ত্রণ ছিল। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক খাতে পুরো অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে কতগুলো বড় কেলেঙ্কারি হয়েছে এবং এটি কিন্তু সংক্রামক ব্যাধির মতো। ধীরে ধীরে এখন বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও তা ছড়িয়ে যাচ্ছে। দুঃখের বিষয়, এ বিষয়গুলো দেখার পরও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০