ব্যাংক খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে  তুলে ধরা হলো:

 

পুঁজিবাজারে বর্তমানে ব্যাংক খাতে এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ খাতে পরিচালক-সংক্রান্ত আইন পরিবর্তন হতে যাচ্ছে এটাই অস্থিরতার বড় কারণ। নতুন আইন অনুসারে, এখন একই পরিবার থেকে চারজনের পরিবর্তে ছয়জন পরিচালক হবে এবং তাদের মেয়াদ ছয় বছরের পরিবর্তে ৯ বছর হবে। এছাড়া ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের মাত্রা এবং নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যেভাবে ঋণ দিচ্ছে, তা খুবই হতাশাজনক। এর মধ্যে আবার পরিচালকসংক্রান্ত আইন কার্যকর হলে ব্যাংকগুলোতে আর কোনো নিয়মনীতি থাকবে না। স্বেচ্ছাচারিতা বাড়বে ফলে খেলাপি ঋণের মাত্রাও ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। এতে এ খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এবং শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের সিইও এমরান হাসান।

মিজানুর রহমান বলেন, ব্যাংকের ক্ষেত্রে লক্ষ করলে দেখবেন কিছুটা অস্থিরতা আছে। এর বড় কারণ হচ্ছে, এ খাতে কিছু পরিবর্তন আসছে। ব্যাংক খাতের পরিচালকসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পার্লামেন্টে পেশ করা হয়েছে এবং অনেকের প্রত্যাশা তা হয়তো এ সেশনেই পাস হবে। আগে ব্যাংকের ক্ষেত্রে একই পরিবার থেকে দুজন সদস্য হতে পারতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারা প্রস্তাব করেছে, একই পরিবার থেকে চারজন সদস্য এবং ছয় বছরের জায়গায় তাদের মেয়াদকাল হবে  ৯ বছর। এ কারণেই ব্যাংক খাতে ভালো গতিবিধি লক্ষ করা গেছে সম্প্রতি। তবে ব্যাংকগুলোর প্রাইস আর্নিং রেশিও এখনও অনেক ভালো এবং তাদের ভলিউম অফ অপারেশন ও প্রফিট অ্যাবিলিটিও ভালো। কিন্তু ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের মাত্রা এবং নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যেভাবে ঋণ দিয়েছে, তা খুবই হতাশাজনক। লক্ষ করলে দেখবেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩টি ব্যাংকের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে, যেগুলোর অবস্থান খুবই খারাপ ছিল। ২০০৯ সালের দিকে বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের মাত্রা ছিল ২০ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, তা  বেড়ে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা হয়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিনগুণ বেড়েছে। এর মধ্যে ৪৫ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করা হয়েছে।

এমরান হাসান বলেন, আমরা দেখছি গত কয়েক মাসে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভর করে বাজারের গতিবিধি ভালো ছিল। তবে বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা এ খাত থেকে কিছুটা সরে আসছে। এখন ভালো শেয়ারগুলোর দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। যার ফলে ওই কোম্পানিগুলোর ভালো কর্মক্ষমতা দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া কিছুদিন আগে বাজারে তালিকাভুক্ত ভালো-খারাপ ৩০টি ব্যাংকেরই ভালো গতিবিধি ছিল। কিন্তু সে চিত্র এখন আর দেখা যাচ্ছে না। এখন যে ব্যাংকগুলো ভালো সেগুলোরই গতিবিধি ভালো। তাছাড়া নীতিমালা পরিবর্তনে বাজারের গতিবিধি ভালো হলে, তা বেশিদিন টেকসই হয় না। এ বছর ২৫ শতাংশের মতো গতিবিধি হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এবং ২০১৩ সালের পর থেকে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে। সব মিলিয়ে এ বছর বাজার খুব ভালো অবস্থায় গেছে।

 

শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০