নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা দরপতনে ব্যাংক খাতের লেনদেন অনেকটা নিচে নেমে গেলেও ফের তা সামান্য বেড়েছে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনে পিছিয়ে পড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন পর্যালোচনায় এমনটিই জানা গেছে।
তথ্যমতে, গেল সপ্তাহে মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের দখলে ছিল ১৭ শতাংশ। আলোচিত সময় খাতটির দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৪৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ সময় মোট লেনদেনে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র পাঁচ শতাংশ। এ খাতের দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের অংশগ্রহণ ছিল ১৬ শতাংশ। এ সময় খাতটির দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
আলোচিত সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে ছিল ছয় শতাংশ। ওই সময় খাতটির দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্যাংক খাতের লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছিল ১৪ শতাংশ এবং আর্থিক খাতের দখলে ছিল ছয় শতাংশ। অর্থাৎ লেনদেনে চিত্রে দেখা যায়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে সামান্য হারে লেনদেন বাড়ছে ব্যাংক খাতে অপরদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের লেনদেন পিছিয়ে পড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণে পুঁজিবাজারে লেনদেন দীর্ঘদিন ধরে মন্দা যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা নীরব ভূমিকা পালন করছে। বাজারের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে স্বাভাবিক গতি ফেরানোর কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানায় তারা। তবুও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
এ সম্পর্কে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে এ অবস্থা চলতে থাকলে সংকট দীর্ঘমেয়াদি হবে।
এদিকে, বাজারের সঙ্গে জড়িত বড় দুটি সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং ডিএসই-ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজারে তারল্য সংকট চলছে। তাছাড়া ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে বাজারে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা আসছে না। একই সঙ্গে ব্যাংকের আমানতের সুদ হার বাড়ায়ও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এসব কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটে বাজার মন্দা যাচ্ছে।
গেল সপ্তাহের শেষদিন ডিএসই বোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারের চলমান সংকট উত্তরনে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট পাঠানো হয়েছে। এ প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট অনুরোধ জানায় সংস্থাটি। এ সময় বিএমবিএ বক্তব্যটি জোড়ালো সমর্থন করেন।
এদিকে, গেল সপ্তাহে ব্যাংক খাতের পিই রেশিও ছিল আট দশমিক চার পয়েন্টে। এরপরে জ্বালানি ও বিমা খাতের পিই রেশিও অবস্থান। খাত দুটির পিই রেশিও যথাক্রমে ১১ দশমিক সাত এবং ১১ দশমিক তিন পয়েন্টে। এছাড়া নন ব্যাংকিং আর্থিক খাতের পিই রেশিও ১৫ দশমিক এক পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহে ব্যাংক খাতের পিই রেশিও আট দশমিক ছয় পয়েন্টে, আর্থিক খাতের পিই রেশিও ১৫ দশমিক ৯ পয়েন্টে অবস্থান করেছিল। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও সামান্য কমেছে। পিই রেশিও যতদিন পর্যন্ত ১৫ এর ঘরে অবস্থান করে ততদিন বিনিয়োগ নিরাপদ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সে হিসেবে ব্যাংক খাতের পিই রেশিও নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
উল্লেখ্য, বাজারে ৩০টি ব্যাংক এবং ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের মৌসুম চলছে।