বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যে দুরবস্থা অতিদ্রুত এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। সংবাদপত্রের পাতা খুললেই দেখা যায়, হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালানোর খবর। দেশ থেকে এভাবে অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে এটা কি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার দেখছে না? বিদেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর তা প্রকাশিত হয়। বিষয়টি অনেক ভাবাচ্ছে। এরপর আবার ব্যাংকে আমানত ও ঋণের ক্ষেত্রে নয়-ছয় করা হয়েছে। আসলে সব মিলিয়ে ব্যাংক খাত এখন বড় একটি চ্যালেঞ্জ। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নুর-ই-নাহারিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এবং সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, গত কয়েক বছরে জিডিপির গ্রোথ অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স ছাড়া প্রধান সূচকগুলো নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। যদি এ নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত থাকে তাহলে ব্যবসা ও কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আবার এখন বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস আতঙ্ক। আর আমাদের দেশে বেশিরভাগ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করে থাকে। এর ফলেও বড় একটি প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটা হচ্ছে ব্যাংক খাত। বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যে দুরবস্থা, অতিদ্রুত এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। একদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। সংবাদপত্রের পাতা খুললেই দেখা যায় হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়েছে। দেশ থেকে এভাবে অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার কী দেখে না। বিদেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর তা প্রকাশিত হয়। বিষয়টি অনেক ভাবাচ্ছে। এরপর আবার ব্যাংকে আমানত ও ঋণের ক্ষেত্রে নয়-ছয় করা হয়েছে। আসলে সব মিলিয়ে ব্যাংক খাত এখন বড় একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগ জিডিপির ২২ থেকে ২৩ শতাংশে থেমে আছে। এটা বাড়ছে না। এ বছর আরও খারাপ হতে পারে। কারণ বেসরকারি খাতে ক্রেডিট গ্রোথ ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। এটা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এটা যদি হয় তাহলে বিনিয়োগ কোথা থেকে হবে? বিনিয়োগ না বাড়লে কীভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে? এতে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো সার্বিকভাবে বিনষ্ট করে দিতে পারে।
এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতি বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু আমাদের দেশ নয়, বিশ্বের সব দেশই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভোগ্যপণ্যসহ দেশের কলকারখানার বেশিরভাগ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করতে হয়। আমরা বেশিরভাগই চীননির্ভর। ইতোমধ্যে চীনের অনেক শহরে কলকারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আকাশপথের যানবাহনও বন্ধ রয়েছে। কথা হচ্ছে, এটা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। ফলে দেশে ব্যাপক সংকট তৈরি হবে। এখন পর্যন্ত চীন থেকে আমদানি করা যে কাঁচামাল রয়েছে তা হয়তো চলছে কিন্তু খুব বেশিদিন চলবে না। যখন এ মজুত শেষ হয়ে যাবে তখন আমরা কী করব? এ পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে সামনের যে সংগ্রাম এবং আর্থসামাজিক জীবন রক্ষার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশে যেসব আমদানিকারক চীনের ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল তাদের সঙ্গে সরকার বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বসা উচিত। আমাদের অপেক্ষা করার দরকার নেই, এরপর কী হবে? চীন থেকে আমদানি করা কাঁচামাল কী পরিমাণ মজুত আছে এবং এ কাঁচামাল দিয়ে কী পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করা যাবে বা কতদিন চলবেÑএ বিষয় নিয়ে এখনই নিবিড়ভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। তা না হলে আর্থিকভাবে অনেক বিপদে পড়তে হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ