Print Date & Time : 28 June 2025 Saturday 3:19 am

ব্যাংক খাত সংস্কার বিষয়ে বাজেটে কিছু নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে রফতানি বৃদ্ধিতে কিছুই রাখা হয়নি। ব্যাংক খাতের সংস্কার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কোনো নীতিনির্ধারণী পরিকল্পনা নেই। খেলাপি ঋণের চেয়েও বড় শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে আর্থিক খাত সংস্কার না করা। পুঁজিবাজার এখনও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উৎস হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ভালো মানের কোম্পানি আনতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মাত্র পাঁচ শতাংশ মানুষের আয় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে অর্থনীতি। পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়তে পারে, এমন কোনো প্রণোদণামূলক উদ্যোগ নেই বাজেটে।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সংলাপে এসব মন্তব্য করেন বক্তারা। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গতকাল ২০১৮-১৯ প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংলাপটির আয়োজন করা হয়। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে আলোচনায় অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এমসিসিআই’র সভাপতি নিহাদ কবির, আইএমএফের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, সিপিডির সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, বিদ্যুৎ খাতের জন্য রফতানি বৃদ্ধি পায়নি সেভাবে। একই কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগও বৃদ্ধি পায়নি। এলএনজি গ্যাস এলে এ সমস্যা দূর হবে। আমাদের এগোনোর সক্ষমতা রয়েছে।
ব্যাংক খাতের নৈরাজ্য ও লুটপাটের অভিযোগের বিষয়ে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, ব্যাংক খাতে নানা ধরনের সংস্কার করা হবে। খারাপ লোকরা যতই শক্তিশালী হোক, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। করপোরেট কর কমানোর কারণ হচ্ছে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা।
বিএনপি নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত দশ বছরে মাত্র পাঁচ শতাংশ মানুষ অগাধ বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। তারা যে পরিমাণ সম্পদ জোগাড় করেছেন, শুধু তা থেকে কর নিলে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বহুগুণ বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারবে এনবিআর। লন্ডনে এখন প্রাইম অ্যাসেট কেনার শীর্ষে রয়েছেন বাঙালিরা। কানাডা ও মালয়েশিয়ায় সম্পদ গড়ছেন। দুবাইয়ে মার্কেটের মালিক এখন বাঙালি। তাদের সবাই চেনে। বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আপনারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশনকে অবলুপ্ত করে দিন। বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিন। গভর্নরও একটি প্রতিষ্ঠান। তাকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সুবিধা দেবেন, এতে প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়বে। ব্যাংকে লুটপাট চলছে। তা বন্ধ করতে কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। এ সরকারের ভোটের প্রয়োজন হয় না। তাই বাজেটে জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করা হয়নি।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন যারা বেকার আছেন, তারা নিজেদের ইচ্ছায় বেকার রয়েছেন। দেশে উবার, পাঠাও এবং বিভিন্ন রাইড শেয়ার রয়েছে। তাতেও কাজ করা যায়, কিন্তু কিছু বেকার আছেন যারা নির্দিষ্ট কাজ ছাড়া করবেন না। এতে সরকারের কী করার আছে? এ জন্য আমি বলি, তারা নিজেদের ইচ্ছায় বেকার রয়েছেন।
সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আমাদের কেন কমছে তা খুঁেজ বের করা দরকার। বিনিয়োগ বাড়াতে, অবকাঠামো নির্মাণে আর্থিক খাতের আমূল সংস্কার করতে হবে। আর্থিক খাত সংস্কার না করা এখন খেলাপি ঋণের চেয়েও বড় শঙ্কায় পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের মতো দেশ যেখানে অনেক বেশি বিদেশি বিনিয়োগ পায়, সেখানে আমরা কেন মাত্র দুই বিলিয়ন ডলার পাচ্ছি? ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ একটি বড় সমস্যা। দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলো ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। তারা স্বল্প মেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ বিতরণ করছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী চিকিৎসকদের উপজেলায় থাকার কথা, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছেন না স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঢাকার হাসপাতালের ভবন উঁচু না করে হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। রাজধানীর ৯৩টি ওয়ার্ডে চিকিৎসক বসিয়ে অনেক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যায়। এজন্য অতিরিক্ত এক হাজার চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে।
এফবিসিসিআই প্রতিনিধি ব্যবসায়ী নেতা মঞ্জুর আহমেদ বলেন, নতুন বাজেটে রফতানি বৃদ্ধির জন্য কিছুই নেই। বাজেট শুধু ব্যবসায়ীবিরোধী নয়, এটা সরকারবিরোধী বাজেট। যারা কর দিয়ে ব্যবসা করছেন ও যারা দিচ্ছেন না, তাদের মধ্যে অনেক দূরত্ব তৈরি করছে। এভাবে মানুষ করদানে উৎসাহিত হবে না। করের চাপ না বাড়িয়ে করনেট বাড়ান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, এ মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে বর্তমানে আামাদের অবস্থান নেমে দাঁড়িয়েছে ১২৭-এ। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হচ্ছে না। ডেমোগ্র্যাফিক সুবিধা আমরা নিতে পারছি না।