ব্যাংক খাত এখন দুষ্টচক্র ও মাফিয়াদের হাতে। কোনোরকম যাচাই-বাছাই ছাড়া এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। ব্যবসায়ী, ব্যাংকের পরিচালক ও শীর্ষ কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের সংঘবদ্ধচক্র সুকৌশলে লুট করছে ব্যাংকের অর্থ। অর্থাৎ, এসব কাজ হচ্ছে ব্যাংক মালিক, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও জালিয়াতচক্রের যোগসাজশে। আসলে ব্যাংক খাত সম্পূর্ণ ভুলনীতিতে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে ঋণখেলাপিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আর নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী ও অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, পুঁজিবাজারের সূচক উঠবে, না বাড়বেÑএটি সরকার ও বিএসইসির কাজ নয়। বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কিন্তু বাজারে স্বচ্ছভাবে শেয়ার কেনাবেচায় কেউ যাতে কারসাজি করতে না পারে, বিনিয়োগকারীর অর্থের সুরক্ষা, সুষ্ঠু পরিবেশ ও ভালো কোম্পানি বাজারে আনাÑএ সবের দায়িত্ব বিএসইসি ও সরকারের। এখানে কোনোভাবে ব্যর্থ হলে তার দায় বিএসইসি ও সরকারকে নিতে হবে। আবার দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাত এখন দুষ্টচক্র ও মাফিয়াদের হাতে। ফলে দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা শুধু ব্যাহতই হচ্ছে না, বড় হুমকিতেও রয়েছে। কোনোরকম যাচাই-বাছাই ছাড়া এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। ব্যবসায়ী, ব্যাংকের পরিচালক, শীর্ষ কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের সংঘবদ্ধচক্র সুকৌশলে লুট করছে ব্যাংকের অর্থ। অর্থাৎ, এসব কাজ হচ্ছে ব্যাংক মালিক, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও জালিয়াতচক্রের যোগসাজশে। ফলে ব্যাংক খাত থেকে প্রতিনিয়ত বেরিয়ে যাচ্ছে আমানতকারীর গচ্ছিত অর্থ। টাকা যাচ্ছে; কিন্তু আর ফিরে আসছে না। এসব কর্মকর্তা বিদেশে ছাড়া দেশেও রয়েছেন। কিন্তু তাদের ধরা হচ্ছে না। আসলে ব্যাংক খাত সম্পূর্ণ ভুলনীতিতে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে ঋণখেলাপিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আর নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের। সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব প্রকট রয়েছে। এ পরিস্থিতে কীভাবে ব্যাংক খাতে ভালো কিছু আশা করেন!
মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই সূচকের একটানা পতন লক্ষ করা গেছে। ফলে একদিনেই ২৭৯ পয়েন্ট হারাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বাজারে বিনিয়োকারী ফেরাতে হলে তাদের আস্থা তৈরি করতে হবে। প্রণোদনা দিয়ে বাজার ভালো করা যাবে না। বাজার যখন খারাপ অবস্থানে থাকে, তখন প্রায়ই দেখা যায় কিছু ব্রোকারেজ হাউসের নেতা প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোঝান যে, এখানে নতুন করে প্রণোদনা দিলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। আসলে এটি সম্পূর্ণই ভুল পরামর্শ। কারণ, দেশে অর্থ ও বিনিয়োগকারীর কোনো অভাব নেই। বিনিয়োগকারী কোনোভাবেই আস্থা পাচ্ছেন না এবং তাদের অর্থের কোনো সুরক্ষাও নেই। তারা সেকেন্ডারি ও প্রাইমারি শেয়ারে বিনিয়োগ করে বারবার লোকসান গুনছেন। সামান্য মুনাফাও পাচ্ছেন না। কথা হচ্ছে, প্রাইমারি মার্কেটে বিনিয়োগ করেও যদি তাদের অর্থের লোকসান হয়, সেক্ষেত্রে তারা কোনোভাবেই বাজারমুখী হবেন না। এমনটি কেন হচ্ছে? এর জন্য দায়ী ডিএসই ও বিএসইসি। তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। গত ১০ বছরে প্রায় ১০০ কোম্পানি বাজারে এসেছে। এখন ওইসব কোম্পানির অধিকাংশেরই খারাপ অবস্থা এবং ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে শেয়ারদর। যখন এসব কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তখন কি আর্থিক প্রতিবেদন পর্যাবেক্ষণ করা হয়নি এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ