বুধবার জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক পরিচালনায় স্বার্থের সংঘাত পরিহার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে প্রতিটি ব্যাংকের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার নিচের দুই স্তর পর্যন্ত কর্মকর্তাদের নিজস্ব ও পারিবারিক ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিবরণ বার্ষিক ভিত্তিতে পর্ষদে দাখিলের জন্য নির্দেশনা নিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পেরেছে, ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য, সেবা কেনাকাটা অর্থাৎ ক্রয় ও সংগ্রহ সম্পর্কিত কার্যক্রমে কোনো কোনো ব্যাংকের পরিচালক বা পরিচালকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে, যা ব্যাংকের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই ব্যাংক-কোম্পানি পরিচালনায় স্বার্থের সংঘাত পরিহার করার লক্ষ্যে আমানতকারীসহ অন্যান্য গ্রাহক এবং ব্যাংক-কোম্পানির স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার লক্ষ্যে এ মর্মে নির্দেশনা দেয়া যাচ্ছে যে, ব্যাংকের কোনো পণ্য, সেবা প্রভৃতি ক্রয় ও সংগ্রহ বা প্রকিউরমেন্ট-সম্পর্কিত কার্যক্রমে পরিচালনা পর্ষদের কোনো পরিচালক বা পরিচালকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ও সেবা কেনার বিধিনিষেধ সময়োপযোগী বলেই আমরা মনে করি। ধরা যাক, কোনো ব্যাংক পরিচালকের কাগজের কারখানা আছে; ওই কারখানায় উৎপাদিত কাগজ ব্যাংকে ব্যবহার হচ্ছে। ভবন থাকলে ভাড়া দেয়া হচ্ছে ব্যাংকের কাছে। আবার কোনো কোনো পরিচালক ব্যাংকের কাছে সেবা ও পণ্য বিক্রি এবং জনবল নিয়োগ দিতে কোম্পানি খুলে বসেছেন। কেউ গাড়ি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এভাবে নানা কায়দায় নিজ ব্যাংক থেকে বাড়তি অর্থ বের করে নিচ্ছেন পরিচালকরা। ফলে ব্যাংকগুলো অনেক সময় মানসম্পন্ন সেবা ও পণ্য দিতে পারছে না। এরপরও তারা বাধ্য হচ্ছে এসব সেবা কিনতে।
কয়েক বছর ধরেই বড় ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর পরিচালনা পর্ষদের চাপ সৃষ্টির অভিযোগ শোনা যায়। আবার তারা ব্যাংকে পণ্য সরবরাহ করে ব্যবসা করবেন, দুটোই অনৈতিক ও অপেশাদার দৃষ্টিভঙ্গি। এটি এ খাতে সুশাসনের পরিপন্থি।
ব্যাংক পরিচালকরা কেবল ব্যাংক পরিচালন মুনাফা থেকে নিয়ম অনুযায়ী লভ্যাংশ ও অন্য সুযোগ-সুবিধা নেবেন। কিন্তু ব্যাংকের সঙ্গে কেনাকাটা করলে তাদের নৈতিক মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। পরিচালকের প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত পণ্য বা সেবা নি¤œমানের হলেও তা বেশি দামে কেনা হবে। এতে ব্যাংকই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার পরিচালকের সুদৃষ্টিতে থাকতে ব্যাংক কর্মকর্তারা পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না। ফলে ব্যাংক কর্মকর্তারাও জড়িয়ে পড়বেন অনিয়মে। তাই সুশাসন নিশ্চিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রজ্ঞাপন যথানিয়মে পরিপালিত হওয়া জরুরি। অনেক প্রজ্ঞাপন জারি হয়, তা প্রশংসিত হয়; কিন্তু পরবর্তী সময়ে তদারকি না করায় প্রত্যাশিত সুফল আসে না। তাই প্রজ্ঞাপন পরিপালনে অনীহা ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ব্যাংক পরিচালনায় স্বার্থের সংঘাত পরিহার ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ প্রজ্ঞাপন স্বার্থের সংঘাত পরিহার এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে পারছে কি না, তাও নজরদারি করতে হবে।