ব্যাংক পুঁজিবাজার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে ভিন্নতা থাকা দরকার

দেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থা শুরু হয়েছে আশির দশক বা তারও আগে। তখন থেকেই মানুষ ব্যাংকমুখী হয়েছে। সে তুলনায় নন-ফাইন্যান্স বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক নতুন। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজারের কাজে পার্থক্য কী? ব্যাংকের মূল কাজ হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ করা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগ করা আর পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করার জায়গা। কিন্তু আমাদের দেশে সবকিছু হযবরল হয়ে গেছে। ব্যাংক যেটা করে, পুঁজিবাজারেও সেটা হয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তাই করে। এখন সময় হয়েছে এদের পুনর্গঠন করার, তিন প্রতিষ্ঠানের কাজ ভাগ করে দেওয়ার। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি ও সিইও আবু জাফর মো. সালেহ এবং পুঁজিবাজারবিশ্লেষক আবু সায়েদ চৌধুরী, এফসিএ।
আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, সম্প্রতি আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো তেমন ভালো করছে না। এসব কোম্পানি যে সংকটের মধ্যে আছে, তা কিন্তু নয়। তবে এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। এই অস্থিরতা অতি শিগগিরই কেটে যাবে মনে করি। আর্থিক খাতের বর্তমানে ২৩টি কোম্পানি পুঁজিবাজারের অন্তর্ভুক্ত আছে। এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুপ্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট উভয় বাজারে ভূমিকা রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। এদের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে আমানতকারীর আমানত, ব্যাংক থেকে ডিপোজিট ও ঋণ সংগ্রহ করা। ব্যাংক ও নন-ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান একে ওপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে এখানে ব্যাংকের সঙ্গে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ব্যাংক চলতি হিসাব ও সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারে আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারে না।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল কাজ হচ্ছে লিজ ফাইন্যান্স করা, কিন্তু ব্যাংকগুলো লিজ ফাইন্যান্স করছে বলে তাদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা বা ভারসাম্যহীনতা বা বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাংকের মূল কাজ হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ করা। কিন্তু তারা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় বিনিয়োগে অর্থায়ন করছে। এখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বিবেচনা করতে হবে যাতে দুই থেকে তিনটি পণ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক থাকে।
দেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থা শুরু হয়েছে আশির দশক বা তারও আগে থেকে। তখন থেকেই মানুষ ব্যাংকমুখী হয়েছে। সে তুলনায় নন-ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক নতুন। আসলে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজারের কাজ কী? ব্যাংকের মূল কাজ হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ করা, আর এটাই হওয়া উচিত। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগ আর পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করার জায়গা। কিন্তু আমাদের দেশে সবকিছু হযবরল হয়ে গেছে। ব্যাংক যেটা করে, পুঁজিবাজারেও সেটা হয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তাই করে। এখন সময় হয়েছে এটাকে পুনর্গঠন করার, তিন প্রতিষ্ঠানের কাজ ভাগ করে দেওয়ার।
বিএসইসির বয়স ২৫ বছর হয়েছে। সে তুলনায় দেশের পুঁজিবাজার শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি। তবে শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। আমরা শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তুলেছি, এ কথা বলব না। তবে চেষ্টা চলছে। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে সরকারের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগকারীরা সুবিধা পাবেন। তবে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে। বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহ উদ্যাপন উপলক্ষে বিএসইসি আয়োজিত ‘বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
আবু সায়েদ চৌধুরী বলেন, ২০১০ ও ২০১১ সালে পুঁজিবাজারে যে কারসাজি হয়েছে এখনও তার ধারাবহিকতা রয়ে গেছে। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কারসাজিকারীদের তেমন কোনো শাস্তি দিতে দেওয়া যায় না। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মূল সমস্যা হচ্ছে নৈতিকতার অভাব। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যতই শক্তিশালী হোক না কেন ব্যক্তি যদি সৎ না হয় সেক্ষেত্রে কোনো কাজে আসবে না। তবে আগের তুলনায় এখন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, সিএসই ও ডিএসই অনেক শক্তিশালী। গত দশ বছরে তিন থেকে চারটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়, যারা গ্রিন ফিল্ডে আছে বা উৎপাদনের প্রাথমিক অবস্থায় আছে। খুব সীমিত কয়েকটি মৌলভিত্তির কোম্পানি ছাড়া বাকিগুলো স্বল্প মূলধনি।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০