ক্রীড়া প্রতিবেদক: আবদুর রাজ্জাক ও তাইজুল ইসলাম ঘূর্ণি বলে শুরু থেকেই দেখান জাদু। তাদের দারুণ সঙ্গ দেন মোস্তাফিজুর রহমান। স্পিন-পেসে তাইতো নকাল হয়েছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দিনশেষে ব্যাটিং ব্যর্থতায় হতাশায় দিন কেটেছে বাংলাদেশের।
মিরপুর শের-ই-বাংলার উইকেটে ধরবে স্পিন। যে কারণে চার বছর পর আবদুর রাজ্জাককে একাদশে ফেরাল টিম ম্যানেজমেন্ট। তাতে শুরু থেকেই হলো কাজ। লঙ্কান টপ অর্ডার বলতে গেলে একাই গুটিয়ে দেন এ বাঁহাতি। অন্য প্রান্তে তাইজুল ইসলাম দেখান স্পিন-ভেল্কি। সঙ্গে আবার যোগ দেন মোস্তাফিজুর রহমান। সব মিলিয়ে চা-বিরতির পর সফরকারীদের তারা গুটিয়ে দেন মাত্র ২২২ রানে। সে সময় থেকেই বড় স্বপ্ন বুনছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু ব্যাট হাতে নিতেই ১২ রানের মধ্যে টাইগাররা হারিয়ে বসে ৩ উইকেট। এরপর দিন শেষ হওয়ার আগে মাহমুদউল্লাহ ইমরুল কায়েসকে হারিয়ে ৪ উইকেটে করেছে ৫৬ রান। দিনেশ চান্দিমালদের চেয়ে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা এখনও পেছনে ১৬৬ রানে।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলে দারুণ ড্রাইভে চারের পর তামিম ইকবাল পরের বলে একই চেষ্টায় লাকমলকে দেন ফিরতি ক্যাচ। কিছুক্ষণ পরই গত টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির নায়ক মুমিনুল হকের বলে কাটা পড়লেন রান আউটে হতাশাজনকভাবে। মুশফিকুর রহিম একবার বাঁচেন সহজতম ক্যাচের সুযোগ দিয়ে, আরেকবার রিভিউতে। তবুও পারেননি ২২ গজে টিকতে। লাকমলের ভেতরে ঢোকা বল দৃষ্টিকটুভাবে ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন। সে সময় বাংলাদেশের ৩ উইকেটে ১২। অবশ্য এরপর চতুর্থ উইকেটে লিটন কুমার দাসকে নিয়ে হাল ধরেন ইমরুল কায়েস। দুজনের জুটিও জমেছিল বেশ। কিন্তু দিন শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগে দিলরুয়ান পেরেরার ভেতরে ঢোকা বল একটু আলসেমি করে ইমরুল গেলেন খেলতে। তাতেই এ বাঁহাতি পড়েন এলবিডব্ল–র ফাঁদে। নিয়েছিলেন রিভিউ। কিন্তু পারেননি বাঁচতে। যে কারণে গতকালের দিনের শেষটা বাংলাদেশের জন্য ছিল বিষাদের ছোঁয়া।
এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল সকালের টসহারা বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা ছিল কী দারুণ। আবদুর রাজ্জাকের হাত ধরে প্রথম উইকেট মিলেছিল দ্রুতই। দিমুথ করুণারতেœ ব্যর্থ এবারও। তবে শুরুর ধাক্কা খুব দ্রুতই সামাল দেয় শ্রীলঙ্কা। তাদের কৌশলটাও ফুটে ওঠে পরিষ্কার; শট খেলে দ্রুত রান বাড়ানোর উপায় খোঁজা। দ্বিতীয় উইকেটে এ জুটি সফরকারীদের এনে দেন ৪৭ রান। তবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা সেই জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। আগের টেস্টে ১৭৩ রান করা ধনঞ্জয়া ডি সিলভা গতকাল দুটি চার ও এক ছক্কায় ১৯ রান করে টার্ন ও বাউন্সে সাব্বিরকে প্রথম সিøপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে।
কুশল মেন্ডিস ও ধানুসকা গুনাথিলকার ব্যাটে আবারও প্রতিরোধ গড়েছিল শ্রীলঙ্কা। লাঞ্চের ঠিক আগে এ জুটি ভাঙতে রাজ্জাকের হাতে বল তুলে দেন টাইগার টেস্ট অধিনায়ক। শুরুর মতো এবারও বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন রাজ। তাও আবার জোড়া আঘাত। গুনাথিলকা ও দিনেশ চান্দিমালকে পরপর দুই বলে সাজঘরের পথ দেখান অভিজ্ঞ এ স্পিনার।
মেন্ডিস আর গুনাথিলাকার ব্যাটে শ্রীলঙ্কা গুছিয়ে উঠছিল আবারও। এ সময়ই রাজ্জাকের আবার ছোবল। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে পরপর দুই বলে উইকেট। গুনাথিলাকা ফিরলেন বাজে শটে। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে দিনেশ চান্দিমাল আউট প্রথম বলেই।
লাঞ্চের পর আবারও রাজ্জাকের সৌজন্যে বাংলাদেশের উচ্ছ্বাস। দারুণ খেলতে থাকা কুসল মেন্ডিসকে এবার তিনি করেন বোল্ড। দলের ১০৯ রানে মেন্ডিসের একারই রান ছিল তখন ১০ চার ও এক ছক্কায় ৬৮। পরের ওভারে নিরোশান ডিকভেলাকেও বোল্ড করেন তাইজুল। ১১০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দিশাহারা শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত ২০০ রান ছাড়ায় রোশান সিলভার ব্যাটে। সপ্তম উইকেট জুটিতে পেরেরার সঙ্গে ৫২ রানের, আর অষ্টম উইকেটে আকিলা দনঞ্জয়ার সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়েন তিনি। তবে এ জুটি দুটিই ভেঙেছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
চার বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে রাজ্জাক নিয়েছেন ক্যারিয়ারসেরা চার উইকেট। সমান উইকেট তাইজুলেরও। তবে দলের সেরা বোলার ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। দারুণ বোলিংয়ে ভুগিয়েছেন লঙ্কানদের। রান আটকেছেন, পাশাপাশি নিয়েছেন দুটি উইকেটও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৬৫.৩ ওভারে ২২২ (মেন্ডিস ৬৮, করুণারতেœ ৩, ধনঞ্জয়া ১৯, গুনাথিলাকা ১৩, চান্দিমাল ০, রোশন ৫৬, ডিকভেলা ১, পেরেরা ৩১, দনঞ্জয়া ২০, হেরাথ ২, লাকমল ৪*; মিরাজ ০/৫৪, রাজ্জাক ৪/৬৩, তাইজুল ৪/৮৩, মোস্তাফিজ ২/১৭)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২২ ওভারে ৫৬/৪ (তামিম ৪, ইমরুল ১৯, মুমিনুল ০, মুশফিক ১, লিটন ২৪*, মিরাজ ৫*; লাকমল ২/১৫, পেরেরা ১/২৫, দনঞ্জয়া ০/৪, হেরাথ ০/১১)।