মো. আসাদুজ্জামান নূর: বছরের প্রথম সপ্তাহ ও আগের বছরের শেষ কার্যদিবস ৩০ ডিসেম্বর ইতিবাচক ছিল পুঁজিবাজার। কিন্তু গতকাল দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে বড় পতন দেখলেন বিনিয়োগকারীরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের কারণে সূচক ও লেনদেন কম হয়েছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারের উত্থানের পর স্বাভাবিক পতন বলা যেত। কিন্তু কভিডের তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত এবং তা থেকে রক্ষা পেতে এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে। গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী, রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ এবং কভিডের টিকা নিশ্চিত করতে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ নতুন করে ভাবাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।
তবে কভিড সংক্রমণ আশঙ্কা নাকি পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক দর সংশোধন, তা এখনই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন এক্সপো ট্রেডার্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল হোসাইন। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ টানা উত্থানের পর পতন, এটা স্বাভাবিক ধরে নেয়া যায়। তবে কভিড সংক্রমণের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। তবে সেটা আরও কয়েক দিন পর নির্দিষ্ট করে বলা যাবে।
গতকাল লেনদেন শেষে ৯৮টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৪৮টির দর। অপরিবর্তিত ছিল ৩২টির। এ কারণে সূচকের ব্যাপক পতন দেখা গেছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বাজার সংশোধনের মধ্যে প্রথমবারের মতো টানা ছয় দিনের উত্থানের সুখস্মৃতি নিয়ে নতুন সপ্তাহে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। বেশিরভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধির পাশাপাশি গত ৭ ডিসেম্বরের পর প্রথম সূচক সাত হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দুপুর ১২টার পর থেকে শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকে, সেইসঙ্গে কমতে থাকে লেনদেন। শেষ আড়াই ঘণ্টায় সূচক কমে ৮০ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৪ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে ছয় হাজার ৯৩২ পয়েন্টে অবস্থান করে। এছাড়া অন্য দুই সূচক ডিএসইএস ৪ ও ডিএস৩০ সূচক ২৩ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।
সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও খানিকটা ভাটা দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন ছিল এক হাজার ৬৮৩ কোটি ৪৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। সেটি কমে হয়েছে এক হাজার ৪৬১ কোটি আট লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক দিনেই কমেছে ২২২ কোটি ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
লেনদেনের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বিবিধ খাত। আগের সপ্তাহেও শীর্ষে থাকা খাতটিতে লেনদেন হয়েছে ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ৬১ শতাংশ কোম্পানির দরপতন ও বাকিগুলোর দরবৃদ্ধি দেখা গেছে।
৬৯ শতাংশ কোম্পানির দরবৃদ্ধিতে লেনদেন বেড়ে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে জীবন বিমা খাত। ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ লেনদেন হয়েছে খাতটিতে। আর ৩০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেয়েছে।
লেনদেনে তৃতীয় সর্বোচ্চ হলেও ব্যাপক দরপতন হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। মোট লেনদেনে আট দশমিক ৯৯ শতাংশ অবদান রেখেছে খাতটি। ৬১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর পতন ও ৩৫ শতাংশের দরবৃদ্ধি দেখা গেছে।
আট দশমিক ৭৫ শতাংশ লেনদেন হয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে। ৬০ শতাংশের দরপতন ও ৩৪ শতাংশের দরবৃদ্ধি দেখা গেছে। পঞ্চম স্থানে থাকা বস্ত্র খাতের লেনদেন দাঁড়ায় সাত দশমিক ৭২ শতাংশে। ৭৬ শতাংশের দরপতনের বিপরীতে ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে দেখা গেছে। এছাড়া লেনদেনে এগিয়ে ছিল প্রকৌশল, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো।
গতকাল সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল রবি। কোম্পানিটির শেয়ারদর চার দশমিক ৮৭ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ১৫ দশমিক ৯১ পয়েন্ট। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর এক দশমিক শূন্য দুই শতাংশ দরপতনে সূচক কমেছে পাঁচ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট। এ ছাড়া বেক্সিমকো, আইসিবি, ব্র্যাক ব্যাংক, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পাওয়ার গ্রিড, বেক্সিমকো ফার্মা, জিপিএইচ ইস্পাত ও এনআরবিসিও সূচক কমিয়েছে। সব মিলিয়ে সূচক ৪০ দশমিক ছয় পয়েন্ট কমিয়েছে এই ১০টি কোম্পানি।
বিপরীতে শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ দর বাড়ায় গ্রামীণফোন সূচকে যোগ করেছে চার দশমিক ৯৭ পয়েন্ট। ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ দর বাড়ার পর সূচকে এক দশমিক ৪২ পয়েন্ট যোগ করেছে বসুন্ধরা পেপার মিল। ফরচুন সুজ, ওয়ালটন, পদ্মা অয়েল, ফারইস্ট লাইফ, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, আর এ কে সিরামিকস, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ও ইউনিলিভারও সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে। সব মিলিয়ে এ ১০টি কোম্পানি সূচকে যোগ করেছে ১৩ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট।