ব্যাসেল-৩ পরিপালনে ইসলামি ব্যাংকিং

. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

ব্যাসেল আদর্শের  মূলকথা: প্রাচীনকালে চীনদেশীয় সভ্যতায় ব্যাংকের ইতিহাস লক্ষণীয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ সালে চীন দেশে প্রতিষ্ঠিত ‘শান্সি ব্যাংক’ এর প্রমাণ। ইতিহাসে ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যযুগ বিবেচনা করা হয় ৪০০ সাল থেকে ১৪০০ সাল পর্যন্ত সময়কালকে। প্রকৃতপক্ষে ওই সময় থেকেই ব্যাংকের কার্যাবলি উন্নত হতে শুরু করে। আধুনিক বিশ্বের সর্বপ্রথম ব্যাংক ‘ব্যাংক অব বার্সিলোনা’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৪০১ সালে। সেই প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান ডিজিটাল আধুনিক যুগে ব্যাংক হয়ে উঠেছে যে কোনো দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের প্রধান হাতিয়ার। বিশ্বে যতগুলো অর্থনৈতিক মন্দা সংঘটিত হয়েছে, তার পেছনে ছিল ব্যাংকিং কার্যাবলির দুর্বল নীতি। ১৯৭৩ সালে সংঘটিত চতুর্থ আরব-ইসরাইল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্ব ব্যাংকিং ব্যবস্থা হুমকিতে পড়ে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি না হয়, সে দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে উন্নত বিশ্বের ১০টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের নিয়ে সুইজ্যারল্যান্ডের ব্যাসেল শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যাসেল কমিটি। ব্যাসেল কমিটি কর্তৃক প্রণীত আদর্শগুলোর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্যগুলো ধারাবাহিকভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে

উল্লেখ করা হলো। ব্যাসেল চুক্তি হচ্ছে ব্যাংকিং তদারকি-সম্পর্কিত ব্যাসেল কমিটি কর্তৃক গৃহীত নীতিমালা ও সুপারিশসমূহ (ব্যাসেল-১, ২ ও ৩), যেগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য ব্যাংকের পুঁজির গুণগত মান ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।

(১) ব্যাসেল কমিটির নাম: ব্যাসেল কমিটি অন ব্যাংকিং সুপারভিশন [Basel Committee on Banking Supervision (BCBS)]নামে পরিচিত, যা ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। (২) ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্ট’ [Bank for International Settlements (BIS)]   নামে বিশ্বের প্রাচীনতম আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি ব্যাসেল কমিটি গঠনের মূলে ছিল, যার সদর দপ্তর ব্যাসেল শহরে অবস্থিত। (৩) ব্যাসেল-১: ব্যাসেল-১, ব্যাসেল আদর্শের প্রথম পিলার, যা ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়। এই আদর্শের প্রধান লক্ষ হলো ক্রেডিট/ঋণ ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গঠন করা। এই লক্ষ্যে আট শতাংশ ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণের মাধ্যমে ক্রেডিট/বিনিয়োগের ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। পাঁচটি মৌলিক উপাদানের ২৫টি ঝুঁকিভিত্তিক উপাদান নির্ধারণ করা হয়েছে, যাদের মোট মান ১০০ ধরে ঝুঁকির মাত্রার ওপর নির্ভর করে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। corporate client-এর জন্য  risk হলো ১২৫ শতাংশ, তবে যদি corporate client বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে স্বীকৃত কোনো credit rating agency দ্বারা AAA হিসাবে  rating পায়, তাহলে সে client–এর বেলায় risk হবে ২০ শতাংশ। (৪) ব্যাসেল-২: ব্যাসেল-২ ব্যাসেল আদর্শের দ্বিতীয় স্তম্ভ, যা ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয়। এই আদর্শ তিনটি পিলারের সমন্বয়ে গঠিত, পিলারগুলো হলো(1) Minimum Capital Requirement, (2) Supervisory Revenue Process Ges (3) Market Discipline| এই আদর্শে ব্যাংকগুলোর জন্য ন্যূনতম মূলধন প্রয়োজনীয়তা ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আদর্শে ক্রেডিট ঝুঁকির সঙ্গে অপারেশনাল ঝুঁকি ও মার্কেট ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। (৫) ব্যাসেল-৩: ব্যাসেল-৩ ব্যাসেল আদর্শের তৃতীয় স্তম্ভ, যা ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়। ব্যাসেল-২-এর তিনটি পিলারের সঙ্গে অতিরিক্ত ন্যূনতম মূলধন প্রয়োজনীয়তা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত দুই দশমিক ৫০ শতাংশের নাম দেয়া হয়েছে ‘Capital Conservation Buffer যা ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে বাস্তবায়ন করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। ব্যাসেল-৩-তে লিভারেজ অনুপাত বৃদ্ধি এবং তারল্য বৃদ্ধির জন্য দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। (৬)Capital Conservation Buffer: এটা ব্যাসেল-২-এর ১০ শতাংশ সিএআরের(CAR) সঙ্গে আরও ২ দশমিক ৫ শতাংশ ক্যাপিটাল যোগ করে সংরক্ষণ করাকে বলে। ২০১৫ সাল থেকে এ ক্যাপিটাল সংরক্ষণের জন্য বলা হয়। সেক্ষেত্রে ২ দশমিক ৫০-কে ৪ দিয়ে ভাগ করে প্রত্যেক বছর পর্যায়ক্রমে বাড়াতে হবে। যদি ব্যাংকের ক্যাপিটাল ন্যূনতম অনুপাতের নিচে নেমে যায়, তবে ব্যাংক সে বছর কোনো প্রকার ডিভিডেন্ড বিতরণ করতে পারবে না। (৭) প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ: ব্যাসেল-৩-তে বলা হয়েছে, সব ব্যাংকের বিনিয়োগ ১০ শতাংশের বেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ রয়েছে, যেমন ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত, যেগুলোকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের আগে অবশ্যই ১০ শতাংশে নামাতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিবছর ১০ শতাংশে অতিরিক্ত যা হবে, তাকে ১০০ শতাংশ ধরে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে কমাতে হবে। ব্যাংকগুলো এরই মধ্যে উল্লিখিত শর্তটি বাস্তবায়িত হয়েছে। (৮)‡oing Concern Capital: ব্যাসেল-৩-তে টায়ার-১ ক্যাপিটালকে ‡oing Concern Capital বলে। এর উপাদান দুটি যথা: Common Equity – (Tier-1) এবং Additional Equity – (Tier-1)। (৯) one Concern Capital: ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী টায়ার-২ ক্যাপিটালকে one Concern Capital বলে। (১০) Minimum Capital Requirement: ব্যাংক কোম্পানি আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে ব্যাংকগুলোকে প্রতি ত্রৈমাসিকে মূলধন পর্যাপ্ততার হার হিসাব দিতে হয়। ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তুলনায় মূলধনের অনুপাত মিনিমাম ১০ শতাংশ সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতাকে বোঝায়, যা ব্যাসেল কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত হয়। (১১) টিআর-১ মূলধন (কোর ক্যাপিটাল): ২০১৫ সালে কোর ক্যাপিটাল তথা টিআর-১ এ ন্যূনতম মূলধনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাসেল-২ যেখানে ৪ শতাংশ ছিল সেখানে ব্যাসেল-৩-তে ৬ শতাংশ করা হয়েছে, যার মধ্যে কমন ইক্যুইটি থেকে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং অতিরিক্ত ইক্যুইটি থেকে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করতে হয়।  (১২) টিআর-২ মূলধন (সাপ্লিমেন্টারি ক্যাপিটাল): ব্যাংকগুলোকে টিআর-২ মূলধন থেকে ৪ শতাংশ ন্যূনতম মূলধন প্রয়োজনীয়তা সংরক্ষণ করতে হয়। (১৩) ব্যাসেল-২ রীতি অনুসারে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে আট শতাংশের (সংরক্ষিত অর্থ) টিআর-১ মূলধন থেকে ৫০ শতাংশ এবং সাপ্লিমেন্টারি ক্যাপিটাল তথা টিআর-২ মূলধন থেকে ৫০ শতাংশ রাখার বিধান করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের ফলে ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন ১২ দশমিক ৫০ শতাংশের  (সংরক্ষিত অর্থ) মধ্যে টিআর-১ মূলধন থেকে ৭০ শতাংশ এবং টিআর-২ মূলধন থেকে ৩০ শতাংশ রাখতে হয়। (১৪) বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানো বিদেশি ব্যাংকগুলো তাদের হেড অফিস থেকে যে মূলধন আনে, তা ব্যাসেল-৩ পরিপালনের শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। (১৫) ব্যাসেল-৩-তে ব্যাংকের মূলধনকে ০২ (দুই) ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ব্যাসেল-২-তে মূলধনকে তিনটি টিআরে ভাগ করা হয়েছিল, যথা টিআর-১, টিআর-২ ও টিআর-৩। ব্যাসেল-৩-তে টিআর-৩ বাদ দেয়া হয়েছে। এখানে মোট মূলধনকে টিআর-১ এবং টিআর-২ ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়েছে। আবার টিআর-১ মূলধনকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা কমন ইকুয়িটি ও এডিশনাল বা অতিরিক্ত ক্যাপিটাল। (১৬) ) Banks for International Settlement (BIS) প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রথমে লিভারেজ অনুপাত ন্যূনতম ৩ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল, যা ব্যাসেল-৩-এর আদর্শে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি ছিল ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন প্রয়োজনীয়তার ব্যাকড্রপ হিসাবে পরিবেশন করা। সাধারণভাবে ব্যাংকগুলোকে ৩ শতাংশের বেশি লিভারেজ অনুপাত সংরক্ষণ করতে হয়। এটি মোট একীভূত ব্যাংক সম্পদের দ্বারা টিয়ার-১ মূলধনকে বিভাজন করে গণনা করা হয়। ব্যাসেল-৩ কাঠামো অনুযায়ী ব্যাংকের মোট টায়ার-১ মূলধন ও মোট সম্পদের অনুপাতকে লিভারেজ অনুপাত বলা হয়। আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানকল্পে ব্যাংকগুলোকে লিভারেজ অনুপাত ৩ শতাংশের সঙ্গে ২০২৩ সাল থেকে বার্ষিক শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে ২০২৬ সালে মধ্যে চার বছরে এক শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। অতএব মোট লিভারেজ অনুপাত চার শতাংশ সংরক্ষণ করতে হবে। যদি একটি ব্যাংকের লিভারেজ অনুপাত পাঁচ শতাংশ বা তার বেশি হয়, তখন আন্তর্জাতিকভাবে ওই ব্যাংকে উত্তম মূলধনবিশিষ্ট (well-capitalized) ব্যাংক বলা হয়। যদি চার শতাংশ হয়, তবে পর্যাপ্ত মূলধনবিশিষ্ট  (Adequately capitalized) ব্যাংক বলা হয়। আর যদি ৩ শতাংশের নিচে হয়, তবে উল্লেখ্যযোগ্যভাবে নিন্ম মূলধনবিশিষ্ট (jabwewkó (Significantly undercapitalized) ব্যাংক বলা হয়। (১৭) ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ (RWA):: ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বলতে সাধারণত যে ঋণ বা বিনিয়োগ ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আদায় করতে হলে ঝুঁকি নিতে হয় তাকে বোঝায়। সব অনাদায়ী ঋণই হলো ঝুঁকিপ্রবণ সম্পদ। অতএব ব্যাংকের মোট সম্পদের মধ্যে যে সম্পদগুলো ঝুঁকি বহন করে, তার সমষ্টিকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বলে। (১৮) Capital to Risk Weighted Ratio: মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত হলো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে জড়িত ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ব্যাংকের উপলব্ধ মূলধন অনুপাত। এই অনুপাত প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে সক্ষম থাকতে সাহায্য  করে। ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রকরা প্রায়ই ব্যাংকগুলোকে তাদের ঋণের/বিনিয়োগের এক্সপোজারের একটি নির্দিষ্ট শতাংশকে (বর্তমান হার ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ) তার সম্পদ হিসাবে রাখতে এবং বজায় রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে। এটি শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়। এই অনুপাত মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তুলনায় মূলধনের পরিমাণ প্রকাশ করে, যাতে আমানতকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। ব্যাসেল-২ অনুযায়ী Core Capital-এর সঙ্গে Supplimentary Capital যোগ করে Risk Weighted Asset দ্বারা ভাগ দিতে হবে। (১৯) ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নে রোডম্যাপ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিআরপিডি সার্কুলার নং-১৮, তারিখ:

২১-১২-২০১৪ ‡uidelines on Risk Based Capital Adequacy (Revised Regulatory Capital Framework for banks in line with Basel III জারি করে। এটি ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা নিরূপণ-সংক্রান্ত নির্দেশিকা। গাইডলাইন্সের ৪নং অনুচ্ছেদের মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে এবং ব্যাংকের মূলধন ও দায়ের মধ্যে যথাযথ ভারসাম্য রক্ষার্থে ব্যাসেল-৩ কাঠামোর আলোকে ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততার পাশাপাশি তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০১৫ সাল থেকে ন্যূনতম ৩ শতাংশ লিভারেজ অনুপাত সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

ব্যাসেল আদর্শগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলোÑব্যাংকগুলোর আমানতকারীর মূলধন সংরক্ষণের মাধ্যমে গ্রাহকের আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম গতিশীল করা। ব্যাংকের প্রধান কাজ হলো বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা। বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগকৃত অর্থ ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, যার ফলে গ্রাহকের আমানতকৃত অর্থ যথাসময়ে ফেরত পাওয়ার অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। এই অনিশ্চয়তা দূর করার জন্য ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ প্রয়োজন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থনৈতিক মন্দার কবল থেকে ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করার জন্য ব্যাসেল আদর্শ পরিপালন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ব্যাংকগুলোর জন্য। ব্যাংকিং কার্যাবলির ক্ষেত্রে কম ঝুঁকিপূণ ইসলামিক ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম থেকে তা বোঝা যায়। প্রচলিত ব্যাংক অর্থকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে, কিন্তু ইসলামিক ব্যাংক অর্থকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজন উৎপাদনশীল শিল্পের প্রসার। ব্যাংকিং কার্যক্রমের ধারা হিসেবে প্রচলিত ব্যাংকগুলো উৎপাদনশীল ও অনুৎপাদনশীল যে কোনো খাতে ঋণ হিসেবে টাকাকে পণ্য গণ্য করে বিনিয়োগ করে থাকে। ফলে ঋণের সম্পূর্ণ টাকা ব্যবসায়িক খাতে ব্যবহার নাও হতে পারে। ফলে প্রতিষ্ঠানের কাম্য মুনাফা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ফলে প্রবৃদ্ধি কমে যায়। অন্যদিকে ইসলামিক ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং কার্যক্রমের ধারা হিসেবে উৎপাদনশীল ও অনুৎপাদনশীলসহ যে কোনো শরিয়াহ্সম্মত পণ্য বা সেবা প্রদানের নিমিত্তে টাকাকে পণ্য হিসেবে গণ্য না করে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে, যার ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে ডিজিটাল আধুনিক যুগে মাকাসিদ আশ শরিয়াহ্র আলোকে গড়ে তোলা সময়ের দাবি। [শেষ]

ব্যাংক কর্মকর্তা

 drmdgulammustafa@gmail.com

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০