Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:11 pm

ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য

মহসিন আলী, বেনাপোল (যশোর): অবকাঠামোগত উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল। নানা সংকটে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দু’দেশের আমদানি-রপ্তানিকারকরা। দীর্ঘদিনেও যুগোপযোগী উন্নয়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি উন্নয়নের জন্য বেনাপোল স্থলবন্দরকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার দাবি উঠেছে।

বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারতের পেট্রাপোলের বনগাঁ মোটর শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন ও বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। ভারতীয় মোটর শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের আল্টিমেটাম, দ্রুত পণ্য খালাসসহ অব্যবস্থাপনার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। সেটি না হলে চলতি মাসে যে কোনো সময় বেনাপোল বন্দরে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেবে তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৭২ সাল থেকে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের বাণিজ্যিক যাত্রা। এ বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে প্রথম থেকেই এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি দু’দেশের ব্যবসায়ীদের। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে বেনাপোল বন্দরে নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়ে আসছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।

বার বার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। বন্দরে জায়গার অভাবে দিনের পর দিন পণ্য নিয়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। যার প্রভাব পড়ছে দেশীয় বাজারে আমদানি পণ্যের ওপর। অথচ এ বন্দর থেকে প্রতি বছর সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হচ্ছে।

এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, এমনিতেই করোনার কারণে তিন মাস বাণিজ্য বন্ধ ছিল। আবার যদি আমদানি বন্ধ হয়ে যায় তবে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন তারা। তবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দাবিকে সমর্থন করেন তিনি।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর ররহমান জানান, সুষ্ঠু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দরে সমস্যার শেষ নেই। বন্দরের জায়গার অভাব আর পণ্য খালাসের যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় সময়মতো পণ্য খালাস নিতে পারছেন না। অথচ এ বন্দর থেকে প্রতিবছর পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে সরকার। নিরাপত্তা সমস্যায় বার বার অগ্নিকাণ্ডে পথে বসছেন ব্যবসায়ীরা।

তিনি বলেন, দিনের পর দিন খালাসের অপেক্ষায় ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় আমদানি খরচ বাড়ছে। সন্তোষজনক সমাধানের মাধ্যমে যাতে বাণিজ্য সচল থাকে তার জন্য আলোচনা চলছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ভারতীয়রা বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েছেন তার যৌক্তিকতা আছে। উন্নয়ন নিয়ে বেনাপোল বন্দরের কোনো মাথাব্যথা নেই।

তিনি বলেন, বন্দরের ধারণক্ষমতা মাত্র ৪০ হাজার টন। কিন্তু পণ্য থাকে সব সময় দুই লাখ টন। অবহেলা-অযত্নে খোলা আকাশের নিচে এসব পণ্যের মান কাদা-পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। বারবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানানো হলেও নজরদারি কম।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আবদুল জলিল বলেন, ইতোমধ্যে বন্দরের বেশকিছু অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। তবে বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ, পণ্যাগার বাড়ানো, চুরি রোধে সিসি ক্যামেরা ও বন্দরের চারপাশে প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বন্দরকে নৌপরিবহনের অধীন থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে উপপরিচালক (প্রশাসন) আবদুল জলিল বলেন, এটা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।

উল্লেখ্য, দেশের চলমান ১২টি বন্দরের সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্বদাতা বেনাপোল বন্দর। বাণিজ্যিক দিক থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের পর বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। বেনাপোল বন্দরে আমদানি পণ্য রক্ষণাবেক্ষণে বন্দরে ৩২টি ওয়ার হাউস, একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড, একটি রপ্তানি টার্মিনাল ও একটি ভারতীয় চ্যাচিজ রাখার টার্মিনাল রয়েছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।