Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 10:39 pm

ব্যয়সাশ্রয়ী হলেও কংক্রিটের সড়কে আগ্রহ নেই সওজের!

ইসমাইল আলী: চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো। এগুলোর প্রায় পুরোটাই বিটুমিন তথা ফ্লেক্সিবল পেভমেন্টের। যদিও এর তুলনায় কংক্রিটের সড়ক বা রিজিড পেভমেন্টের স্থায়িত্ব দ্বিগুণের বেশি। এছাড়া কংক্রিটের সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও অনেক কম। আর নির্মাণ ব্যয়ে পার্থক্য কিলোমিটারপ্রতি দুই কোটি টাকারও কম। এর পরও কংক্রিটের সড়ক নির্মাণে আগ্রহ নেই সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের সংশ্লিষ্টদের।

সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে স্বাভাবিকভাবে বিটুমিনের সড়ক নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছর বন্যা ও টানা বর্ষণে সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সুষ্ঠু মেরামত না করায় বছর ঘুরলেও এ চিত্রের পরিবর্তন হয়নি। ফলে আগামী বর্ষায় সড়কপথে চলাচল কঠিন হয়ে উঠবে। তবে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করলে এক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হতো। আবার এত দ্রুত মেরামতও করতে হতো না। ফলে শক্তিশালী সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো, বিশেষত যেখানে পানি নিষ্কাশন সুবিধা কম সেখানে কংক্রিট ব্যবহারই উত্তম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিটুমিনের সড়ক ডিজাইন করা হয় সাধারণত ১৫-২০ বছরের জন্য। এ সড়কের চারটি স্তর থাকে, যার প্রতিটি স্তরই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতিরিক্ত লোডের কারণে এ ধরনের সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। আর কংক্রিটের সড়ক ডিজাইন করা হয় ৩০-৪০ বছরের জন্য। এ ধরনের সড়কে ট্রাফিক লোড বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়, যা স্ট্রেস হ্রাস করতে সাহায্য করে। ফলে নিচের স্তরের পুরুত্ব ও গুরুত্ব দুই কমে।

এদিকে বিটুমিনের সড়ক মসৃণ তাই গাড়ি চলাচল আরামদায়ক। এ ধরনের সড়কে শব্দদূষণ কম। পাশাপাশি মেরামতে ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম। যদিও পানি জমে থাকলে এ সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তবে এ সড়কে ব্যবহার করা ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট শতভাগ রিসাইকেল যোগ্য। আর কংক্রিটের সড়কে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ দরকার হয় না। তবে এ সড়ক নির্মাণে দক্ষ শ্রমিক বেশি লাগে। আবার এটি নির্মাণশেষে ব্যবহার উপযোগী হতে ২৮ দিন সময় লেগে যায়।

এতে আরও বলা হয়েছে, বিটুমিনের সড়ক এক কিলোমিটার নির্মাণ ব্যয় ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর কংক্রিটের সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয় ১১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ কংক্রিটের সড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় এক কোটি ৮৩ লাখ টাকা বেশি। তবে যেসব সড়কের ডিজাইন ট্রাফিক (গাড়ি চলাচলের পরিমাণ) তিন লাখ ৭০ হাজারের বেশি সেখানে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ সাশ্রয়ী। এছাড়া সাত দশমিক তিন মিটার প্রশস্ত ও দেড় মিটার হার্ড শোল্ডার আয়ে এমন সড়ক (নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিবেচনায়) কংক্রিট বেশি সাশ্রয়ী।

যদিও বিটুমিনের সড়কে রোড মার্কিং অনেক বেশি দৃশ্যমান হয়, এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকে। এছাড়া ধাপে ধাপে নির্মাণ করা যায়। আবার নির্মাণ ও মেরামতের সময়ও যানবাহন চলাচলে সড়ক ব্যবহার করা যায়।

বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৮৬ শতাংশ গ্রামীণ ও ৭৮ শতাংশ শহরাঞ্চলের সড়ক বিটুমিনের তৈরি। আর দক্ষিণ কোরিয়ার চার হাজার কিলোমিটারের বেশি এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্কের ৭০ শতাংশ কংক্রিটের। তবে বিটুমিনের সড়ক নির্মাণে উৎকর্ষ সাধনের পর এখন কংক্রিটে আগ্রহ কমছে দেশটির।

প্রতিবেদনে সওজের বর্তমান অবস্থা তুলে বলা হয়েছে, সওজের আওতাধীন বিভিন্ন মহাসড়কের সাবগ্রেডের মাটির ধরন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা প্রভৃতি বিবেচনায় কংক্রিট বা বিটুমিনের সড়ক নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। যেমন: সিলেট-কোম্পানিগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কটিতে পুরোটাই কংক্রিটের ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য  যেসব  প্রকল্পে পানি নিষ্কাশনের সুবিধা নেই অথবা পানি জমে যাওয়ার সমস্যা আছে, এমন স্থানে (যেমন: বাজার  এলাকা) কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। বাকি সড়ক বিটুমিনের নির্মাণ করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ বেশ জটিল। এতে ২৮ দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়, যা দেশের প্রেক্ষাপটে কঠিন। আবার এতে নির্মাণ ব্যয়ও কিছুটা বেশি। এছাড়া ব্যয়সাশ্রয়ী ও রি-সাইকেল সুবিধা থাকা, মেরামত সহজ, সড়ক নিরাপত্তা প্রভৃতি বিবেচনায় বিটুমিনের সড়ক নির্মাণে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা হয়।