হামিদুর রহমান : প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় প্রায় প্রতি মাসেই বাড়ছে ইন্টারনেট সংযোগ। মোবাইল ইন্টারনেটের পাশাপাশি অনেক বাসাতেও ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। আর বিভিন্ন অফিস তো আজকাল ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছাড়া চিন্তাই করা যায় না।
দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। রাজধানী ঢাকায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেশি হলেও বিভাগ হিসেবে ব্রডব্যান্ড সংযোগে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে রংপুর বিভাগ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সম্প্রতি প্রকাশিত ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে, ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। দেশের ৬১ হাজার ২৪২টি খানায় (হাউজহোল্ড) জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিবিএস’কে সহায়তা করেছে ইউনিসেফ।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশের মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড সংযোগ রয়েছে ৩৩ দশমিক দুই শতাংশ। আর শহরে এর ব্যবহারকারী ৫৩ দশমিক এক শতাংশ।
এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে বর্তমানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে প্রায় ৪৯ দশমিক দুই শতাংশ খানায়। এর পরের অবস্থানে থাকা ঢাকা বিভাগে ব্রডব্যান্ড সংযোগ রয়েছে ৪৭ শতাংশ খানায়। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিলেট বিভাগ। এ বিভাগে বর্তমানে ৪০ দশমিক আট শতাংশ খানায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। এছাড়া যথাক্রমে খুলনা বিভাগে ৩৮ দশমিক সাত শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৩২ দশমিক দুই শতাংশ, রাজশাহী বিভাগ ২৮ দশমিক তিন শতাংশ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ব্রডব্যান্ড সংযোগ রয়েছে ২৬ দশমিক দুই শতাংশ খানায়। আর ১৮ দশমিক তিন শতাংশ সংযোগ নিয়ে এক্ষেত্রে সবচেয়ে পেছনে অবস্থান করছে রংপুর বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আবদুল হাকিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ঢাকায় মূলত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বাস করে। এখানে উচ্চ আয়ের মানুষ যেমন বাস করে, তেমনি অতি দরিদ্রের সংখ্যাও অনেক বেশি। আরও একটি বিষয় হচ্ছে, শহরে প্রায় সব মোবাইল ফোন অপারেটরের নেটওয়ার্ক ভালো। তাই বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এজন্য ঢাকায় ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী কিছুটা কম। তবে এখানে অফিস-আদালতে ব্রডব্যান্ড বেশি ব্যবহার করা হয়। আর ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রাম, সিলেট বা অন্য বিভাগীয় শহরে নেটওয়ার্ক অতটা শক্তিশালী নয়। অন্যদিকে চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী পরিবারের সংখ্যা বেশি। আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় সেখানে ব্রডব্যান্ড সংযোগ ঢাকার তুলনায় বেশি।’
এদিকে বিবিএসের প্রতিবেদনের আটটি বিভাগে বাসাবাড়িতে (অফিস ব্যতীত) কম্পিউটার ও ট্যাবলেট ব্যবহারের তথ্যও উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, কম্পিউটার ও ট্যাবলেট ব্যবহারের শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা বিভাগ। এখানে প্রায় ৯ শতাংশ বাসায় কম্পিউটার ও ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। সেখানে প্রায় পাঁচ দশমিক চার শতাংশ বাসায় কম্পিউটার ও ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। এছাড়া তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিলেট বিভাগ। যেখানে পাঁচ দশমিক এক শতাংশ বাসায় কম্পিউটার ও ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। চার দশমিক ৯ শতাংশ বাসায় কম্পিউটার ও ট্যাবলেট ব্যবহার করে চতুর্থ অবস্থানে আছে রাজশাহী বিভাগ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। সেখানে প্রায় চার দশমিক আট শতাংশ বাসায় কম্পিউটার ও ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। আর এক্ষেত্রে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। সেখানে তিন দশমিক তিন শতাংশ বাসায় কম্পিউটার ও ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ। সেখানে প্রায় তিন দশমিক দুই শতাংশ বাসায় কম্পিউটার ও ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। আর তিন দশমিক এক শতাংশ বাসায় কম্পিউটার ও ট্যাবলেট ব্যবহার করে সবশেষ অবস্থানে রয়েছে রংপুর বিভাগ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৮০ লাখ ৮৪ হাজার, আর মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ ২৮ হাজার।