শেয়ার বিজ ডেস্ক: চলতি বছরের নভেম্বরে ব্রিটেনে মূল্যস্ফীতি বেড়ে এক দশমিক দুই শতাংশে পৌঁছেছে। অক্টোবরে এটি ছিল দশমিক ৯ শতাংশ। আর এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে পোশাক ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি। খবর বিবিসি।
নভেম্বরে ব্রিটেনের ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) ১ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছায়। ২০১৪ সালের অক্টোবরের পর এটিই সর্বোচ্চ।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসস্টিক (ওএনএস), সম্পতি ব্রিটেনে পোশাকের দাম বেড়ে ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। পাশাপাশি পেট্রলের দাম বৃদ্ধিও গত মাসে প্রত্যাশার চেয়ে মূল্যস্ফীতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ওএনএস’র মূল্যস্ফীতি বিভাগের প্রধান মাইক প্রেস্টউড বলেন, নভেম্বরে পাউন্ড স্টার্লিংয়ের মান কিছুটা কমায় এবং মূল্যস্ফীতির কারণে ব্রিটেনে কাঁচামাল আমদানি খাত কিছুটা চাপে পড়ে। পোশাক ও জ্বালানির দাম নভেম্বরে মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ।
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএইচএস মার্কেটের প্রধান অর্থনীতি বিশ্লেষক হাওয়ার্ড আর্চার বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় পোশাকের দাম ও ভোক্তাদের আচরণে অস্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ায় খুচরা বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘নভেম্বরে ব্রিটেনে শীতের পোশাকে তুলনামূলক কম মূল্যছাড় ছিল। ওই সময়ে বিশেষ করে নারী ও পুরুষদের ভ্রমণ পোশাকের দাম বেড়েছে বেশি।’ পাউন্ডের মান কমে যাওয়ার সঙ্গে মূল্যস্ফীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে মূল্যস্ফীতির এ বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাউন্ডের দরপতনে বিদেশ থেকে খাদ্য ও পোশাক ক্রয়ে বেশি খরচ গুনতে হচ্ছে দেশটিকে। ফলে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। পাউন্ডের দরপতনে আগামী বছরও পোশাকের দাম বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন প্যানথিওন ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ সেফারসন।
অক্টোবর ও নভেম্বরের মধ্যে দেশটিতে পেট্রলের দাম লিটারপ্রতি ১ দশমিক ৬ পেনি বেড়ে ১১৫ দশমিক ৪ পেনি হয়েছে। আর ডিজেলের দাম ২ পেনি বেড়ে ১১৮ পেনি হয়েছে।
এছাড়া গত মাসে খাদ্য ও অ্যালকোহলবর্হিভূত পানীয়র দাম দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের একই মাসের তুলনায় এ মূল্য চারগুণ বেশি।
মূল্যস্ফীতি পরিমাপের অন্যতম মানদন্ড রিটেইল প্রাইস ইনডেক্স (আরপিআই) আগের মাসের তুলনায় দুই শতাংশ বেড়ে নভেম্বরে দুই দশমিক দুই শতাংশে পৌঁছেছে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড পূর্বাভাসে বলেছে, ২০১৭ সালে ব্রিটেনের মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে দুই দশমিক সাত শতাংশ এবং ২০২০ সাল পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি দুই শতাংশের উপরে থাকবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া বা ব্রেক্সিট ভোটের পর সম্প্রতি ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের ২০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়। গত ৩১ বছরের ইতিহাসে যা সবচেয়ে বড় পতন।
এর আগে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নি বলেছিলেন, পাউন্ডের দরপতন দেশটির অর্থনীতিকে সমন্বয় করতে সাহায্য করবে। তবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এটা কঠিন হবে। পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে খাদ্যপণ্য বড় ভূমিকা রাখবে। আগামী কয়েক বছর পণ্য ও সেবা খাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে দেশটির অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাউন্ডের দরপতনে পোশাক, খাদ্য ও জ্বালানি ব্যয় আরও বেড়ে গেলে আগামী বছর মুদ্রাস্ফীতি তিন শতাংশে পৌঁছাতে পারে। পাউন্ডের দরপতনে সম্প্রতি ১০ বছর মেয়াদি ব্রিটেনের সরকারি বন্ড ১০ বেসিস পয়েন্টে এক দশমিক ১৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ব্রেক্সিট ভোটের পর এটাই সর্বোচ্চ। কার্নি বলেছিলেন, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা দুই শতাংশ দেখতে চায়। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট ভোটের পর ব্যাংক যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে চার থেকে পাঁচ লাখ চাকরি ঝুঁকির মধ্যে থাকতো। ব্রেক্সিটের পর ব্যাংকটি সুদের হার কমিয়েছে এবং আগে থেকে বেশি আর্থিক উদ্দীপনা দিচ্ছে।