শেয়ার বিজ ডেস্ক: অবশেষে কার্যকর হলো ব্রেক্সিট। প্রথম কোনো দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়েছে ব্রিটেন। প্র্রায় তিন হাজার কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড ব্যয়ে চ‚ড়ান্ত হয়েছে ইইউ প্রত্যাহার চুক্তি। গত ৩০ জানুয়ারি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ৬২১-৪৯ ভোটে আনুষ্ঠানিকভাবে পাস হয় চুক্তিটি। ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে দেশটিতে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে ব্রিটিশদের জীবনযাত্রায়। ব্রেক্সিটের কারণে যেসব পরিবর্তন আসবে, তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসির প্রতিবেদনে তুলো ধরা হয়েছে।
নাইজেল ফারাজ ও অ্যান উইড্ডেকমবের মতো পরিচিত মুখগুলোসহ ব্রিটেন থেকে ৭৩ সদস্য ছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে। ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার ফলে তারা তাদের সদস্যপদ হারাবেন, কারণ ব্রিটেন একই সঙ্গে ইইউ’র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোও ছেড়ে যাচ্ছে। তবে অন্তর্বর্তীকালে (চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত) ইইউ’র আইনকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে ব্রিটন। তাই ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস আইনি সমস্যাগুলোর বিষয়ে চ‚ড়ান্ত মতামত দেওয়া অব্যাহত রাখবে। ভবিষ্যতে ইইউ কাউন্সিল সামিটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অংশ নিতে চাইলে তার জন্য বিশেষ আমন্ত্রণ প্রয়োজন হবে। ব্রিটিশ মন্ত্রীরাও এখন থেকে আর ইইউর নিয়মিত বৈঠকগুলোতে অংশ নিতে পারবেন না।
ব্রিটেন তাদের পণ্য ও সেবা বিক্রি বা এসব কেনার জন্য নতুন নিয়ম ঠিক করতে বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারবে। ইইউর সদস্য থাকার সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য আলোচনা করতে পারত না ব্রিটেন। তাই ব্রেক্সিট সমর্থকরা বলছেন, নিজের বাণিজ্যনীতি ঠিক করার স্বাধীনতা ব্রিটেনের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।
৩০ বছর পর ব্রিটেনে আবার ফিরে আসবে নীল রঙের পাসপোর্ট। ২০১৭ সালে এ পরিবর্তনের কথা ঘোষণা দিয়ে তখন অভিবাসনমন্ত্রী ব্রান্ডন লুইস দেশটির ঐতিহ্যবাহী নীল ও সোনালি নকশার পাসপোর্ট আবার ফিরিয়ে আনার কথা বলেছিলেন। এ পাসপোর্ট প্রথম ব্যবহার শুরু হয়েছিল ১৯২১ সালে। তবে বর্তমান যে পাসপোর্ট আছে সেটিও বৈধ থাকবে।
৩১ জানুয়ারি থেকে প্রায় ৩০ লাখ বিশেষ কয়েন আনছে ব্রিটেন, যেখানে লেখা থাকবে ‘পিস, প্রসপারিটি অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ উইথ অল নেশনস’। এরই মধ্যে এ কয়েনকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। একপক্ষ এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা এ কয়েন বর্জন করবে। তবে সরকার একই ধরনের আরেকটি কয়েন আনার পরিকল্পনা করছে, যেখানে উল্লেখ থাকবে ৩১ অক্টোবর, যে তারিখে প্রকৃতপক্ষে ব্রেক্সিট কার্যকরের কথা ছিল।
ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের যে বিভাগ আলোচনা চালিয়েছিল, সেই বিভাগটি বন্ধ হয়ে যাবে। ২০১৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সময়ে ওই বিভাগটি চালু করা হয়েছিল। আগামী দিনগুলোতে ব্রিটেনের নেগোসিয়েশন টিম হবে ডাউনিং স্ট্রিট, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর অফিসভিত্তিক।
কাউকে ব্রিটেনে প্রত্যর্পণ করতে পারবে না ইইউ। সন্দেহভাজন অপরাধী কেউ যদি ব্রিটেন থেকে পালিয়ে গিয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেয় তাহলে তাকে ফেরত পাবে না ব্রিটেন, কারণ সংবিধান অনুযায়ী ইইউভুক্ত দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের নাগরিককে প্রত্যর্পণের সুযোগ নেই। ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ইউরোপিয়ান অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রয়োগ অন্তর্বর্তী সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।