শেয়ার বিজ ডেস্ক: ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থন দেওয়া আইনপ্রণেতাদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ ইস্যুতে চতুর্থবারের মতো ভোটাভুটির আয়োজনের চেষ্টা করছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এর আগে গত শুক্রবার তৃতীয়বারের মতো পার্লামেন্টে তার ব্রেক্সিট পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হয়। তখন থেরেসা মে বলেছিলেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে ব্রিটেনের একটি বিকল্প পথে এগুনোর দরকার হতে পারে। এদিকে চুক্তি প্রত্যাখ্যানের পর দেশটির মুদ্রা পাউন্ডের দরপতন হয়েছে। খবর: বিবিসি।
২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের রায় অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ত্যাগের কথা ছিল ছিল ব্রিটেনের। ব্রেক্সিট-পরবর্তীকালে ইইউ’র সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের শর্ত নির্দিষ্ট করে তৈরি হয় ব্রেক্সিট চুক্তি। কিন্তু ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে দু’দফায় তা হাউস অব কমন্সে পাস করাতে ব্যর্থ হন। তৃতীয় দফায় চুক্তিটি পার্লামেন্টে তোলার আগে ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের তারিখ পরিবর্তন করাতে সমর্থ হন থেরেসা মে। শুক্রবার তৃতীয় দফায় ভোটাভুটির আগে তিনি বলেছিলেন, তার প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে যদি এমপিরা সমর্থন দেন, তাহলে তার বদলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতেও প্রস্তুত। তা সত্ত্বেও প্রত্যাখ্যাত হয় তার ব্রেক্সিট পরিকল্পনা।
এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চতুর্থবারের মতো ভোটাভুটির আয়োজনের উদ্যোগ নিলেও বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন থেরেসার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হয় পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনুন; অন্যথায় অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।
থেরেসা সরকারকে সমর্থন করা উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডিউপি দলও চুক্তির বিরোধিতা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া নিজের পরিকল্পনার পক্ষে নিজ দলের ৩৪ বিদ্রোহীর সমর্থন আদায়েও ব্যর্থ হয়েছেন থেরেসা মে। তা সত্ত্বেও চুক্তির সমর্থনে আইনপ্রণেতাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ব্রেক্সিট নিয়ে থেরেসার পরিকল্পনা পার্লামেন্টে প্রথম দফার ভোটাভুটিতে ১৪৯ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়। তৃতীয় দফায় এ ব্যবধান নেমে আসে ৫৮তে। সেদিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, তাদের প্রচেষ্টা সঠিক পথেই এগুচ্ছে।
এদিকে ব্রেক্সিট নিয়ে চলমান এ সংকটে গত শুক্রবার ব্রিটেনের মুদ্রা পাউন্ডের দরপতন হয়েছে। প্রতি ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দর নেমে যায় এক দশমিক ২৮৯ ডলারে। যদিও গত কয়েক দিন ধরে পাউন্ড কিছুটা ধীরগতিতে মান ফিরে পাচ্ছিল। এর আগে পাউন্ড ডলারের বিরপীতে শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে প্রতি পাউন্ড দাঁড়িয়েছিল এক দশমিক ৩০ ডলারে। ওই সময় ইউরোর বিপরীতে পাউন্ডের দর কমছিল শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। প্রতি পাউন্ডের বিপরীতে ইউরোর দাম দাঁড়ায় ১.১৫৭৩-এ।
এদিকে তৃতীয় দফায় ব্রেক্সিট চুক্তি পাস না হওয়ায় ব্রিটিশ সরকারের বন্ডের মূল্য বেশ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। এরই মধ্যে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা দেশটির সরকারি বন্ডের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। ১০ বছরমেয়াদি বন্ডের মূল্য এক শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ব্রেক্সিট নিয়ে জটিলতার মাঝে বিশেষ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কয়েক দফা পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখার পর আর্থিক বাজারে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি।
মুদ্রা বিশেষজ্ঞ জেরেমি থমসন-কুক বলেছেন, আপাতত ব্রেক্সিট নিয়ে জটিলতার অবসান না হলে পাউন্ডের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।