মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: চলতি মাসের মধ্যেই বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নে বাধ্যবাধকতা থাকায় বিনিয়োগকারীদের হিড়িক পড়েছে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে। ইতোপূর্বে গত কয়েক বছর ধরে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের ঢিলেমি ভাব থাকলেও এবার এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে কোনো কোনো ব্রোকারেজ হাউজ বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নের বাড়তি ফি নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নের সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে নবায়ন না করলে কোনো ধরনের নোটিস ছাড়াই এসব অ্যাকাউন্ট বাতিল করা হবে। তবে যে সব বিওতে শেয়ার বা টাকা রয়েছে সেই অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখা হবে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ের পর আর কোনো বিও নবায়নের সুযোগ থাকছে না। কারণ ৩০ জুনের পর অ্যাকাউন্ট নবায়েনর সময় বাড়ানো হবে না। ফলে হাউজগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নবায়ন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তারা জানান, প্রথমদিকে বিনিয়োগকারীরা বিও ফি পরিশোধে তেমন আগ্রহ দেখান না। শেষ সময়ে এসে তারা বিও ফি পরিশোধ করার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। তখন আমাদের বিও ফি গ্রহণ করতে হিমশিম খেতে হয়। কখনও কখনও এ কাজ করার জন্য আমাদের অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করতে হয়। তবে এ বছর বিও নবায়নে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য যেমন সুবিধা তেমনি তাদের জন্যও ভালো।
বিভিন্ন হাউজ কর্তৃপক্ষ জানায়, বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি জানানোর জন্য আমরা হাউজে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকি। যাতে তারা সময়মতো ফি পরিশোধ করতে পারেন।
বিষয়টি প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় অনেক অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে যায়। এর মধ্যে বেশিরভাগ হচ্ছে আইপিওতে আবেদন করা অ্যাকাউন্ট। তারা আইপিওতে সুবিধা করতে না পারলে অ্যাকাউন্ট নবায়নে আগ্রহ দেখায় না। সেই কারণেই বিও বাতিল হয়।’
একই প্রসঙ্গে সিনথিয়া ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের জানানোর জন্য আমরা মোবাইলে এসএমএস দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে জানানোর চেষ্টা করি। তারপরও অনেকে অ্যাকাউন্ট নবায়ন করেন না; কিন্তু অ্যাকাউন্ট বাতিল হলে পরে ঝামেলা করেন। বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি বোঝা উচিত।’
নিয়ম অনুযায়ী, ৪৫০ টাকা দিয়ে বিও নবায়ন করতে হবে। আগে ৫০০ টাকা দিয়ে বিও নবায়ন করা হতো। গত বছর এ ফি বাবদ চার্জ ৫০ টাকা কমিয়ে আনা হয়। বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে গত বছর বিও অ্যাকাউন্টের বার্ষিক নবায়ন ফি ৫০ টাকা কমিয়ে ৪৫০ টাকায় নির্ধারণ করার উদ্যোগ নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে অভিযোগ পাওয়া যায় কিছু ব্রোকারেজ হাউজ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা বিও নিচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বললে সিডিবিএলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্রকান্তি চৌধুরী বলেন, বিএসইসির বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী হাউজগুলোর ৪৫০ টাকায় অ্যাকাউন্ট নবায়ন করার কথা। নিয়ম অনুযায়ী কোনো হাউজেরই এর বাইরে ফি নেওয়ার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, বিও নবায়ন বাবদ যে ৪৫০ টাকা নেওয়া হয় এর মধ্যে থেকে ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট (ডিপি) পায় ১০০ টাকা। বাকি ৩৫০ টাকা পায় সিডিবিএল এবং বিএসইসি। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩ এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাব রক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতিবছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে।