মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি লেনদেন খরায় ভুগছে পুঁজিবাজার। একদিকে বিনিয়োগকারী স্বল্পতা, অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ায় তলানিতে নেমে গেছে লেনদেন। আশঙ্কাজনকহারে লেনদেন কমতে কমতে এখন তা নেমে গেছে ৩০ লাখ টাকার নিচে। আর এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ব্রোকারেজ হাউস মালিকরা।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীর উপস্থিতি কমছে। করোনাভাইরাসের কারণে বাজারের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন সবাই। ফলে বিনিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন তারা। তাদের কেউ কেউ মনে করছেন দেশজুড়ে আবারও লকডাউন হতে পারে। এমন হলে পুঁজিবাজারও বন্ধ থাকবে। তখন নগদ অর্থ সংকটে পড়বেন তারা। যে কারণে এখন বাজারে বিনিয়োগে অনীহা তাদের।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস শনাক্তের আগেই পুঁজিবাজারে পতন ঠেকাতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়মে শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারবে না, কিন্তু দর বাড়তে পারবে। পরে বিষয়টি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই লেনদেন স্থবির হয়ে রয়েছে। শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসে আটকে যাচ্ছে, কিন্তু বাড়তে দেখা যাচ্ছে না। এতে বাজারের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যে কারণে লেনদেনও বাড়ছে না।
বর্তমানে ডিএসইর নিবন্ধিত ব্রোকারেজ হাউসসংখ্যা ২৫০টি। এর মধ্যে মোট আটটি হাউস ভিন্ন ভিন্নভাবে বহুদিন থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। বাকি ২৩৮টি হাউসের নিয়মিত লেনদেন হচ্ছে। এর মধ্যে নামমাত্র কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসে কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হলেও অধিকাংশয়ের অবস্থা খুবই করুণ। বিনিয়োগকারী শূন্যতা এবং করোনার ধাক্কায় হাউসগুলোর গড় লেনদেন নেমে এসেছে ৩০ লাখ টাকার নিচে।
গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট ৬১ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়। অর্থাৎ হাউসগুলোর গড় লেনদেন হয়েছে ২৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। অথচ একসময় প্রতিটি হাউসের গড় লেনদেন ছিল ১০ কোটি টাকার বেশি।
এদিকে লেনদেন কমে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ব্রোকারেজ হাউস মালিকেরা। কারণ এখন লেনদেন থেকে যে আয় হচ্ছে তা দিয়ে তাদের দৈনিক লেনদেন চালিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
জানতে চাইলে একটি ব্রোকারেজ হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের তিনটা শাখা অফিসসহ একসময় প্রতিদিনের লেনদেন ছিল পাঁচ থেকে ১০ কোটি টাকা। এখন তা ২০ লাখ টাকার নিচে। ফলে ব্যবসা চালিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এখন লেনদেনের যে অবস্থা তাতে বাজার বন্ধ থাকাই ভালো ছিল। কারণ কোনো কোনো হাউসে লেনদেন ১৫ লাখ টাকার নিচে নেমে গেছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি পুঁজিবাজারের পরিবেশও ভালো নেই। লেনদেনও অনেক নিচে নেমে গেছে। এ অবস্থায় ব্যবসা চালিয়ে নিতে সবাইকেই বেগ পেতে হচ্ছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়েছে। ফলে লেনদেনও কমেছে। বাজার ভালো হলে নিশ্চয়ই এর পরিবর্তন আসবে তখন বিষয়টি ঠিক হয়ে যাবে।
অন্যদিকে ব্রোকারেজ হাউসে যারা কর্মরত রয়েছেন, তাদের মধ্যে ছাঁটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাশাপাশি করোনা আতঙ্কে রয়েছেন তারা। নতুন করে রেড জোন ও ইয়োলো জোন ভাগ করায় হাউসে আসতেও সমস্যা হচ্ছে অনেকের। তারা চাচ্ছেন এ অবস্থায় লেনদেন বন্ধ থাকুক।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এখানে যারা কর্মরত রয়েছেন তারা শঙ্কিত। কারণ তাদের যদি কোনো ধরনের সমস্যা হয়, সে দায় কিছুটা হলেও আমাদের ওপর বর্তাবে।’ তিনি বলেন, ‘ডিএসই কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।’